সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামে তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। তিনি সংগঠনটির চেয়ারম্যান। তার আরেকটি বিশেষ পরিচয় আছে। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের ইমাম। দেশ-বিদেশে একজন সুফি আলেম হিসেবে তিনি সুপরিচিত। তার বাবা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ সুফি ব্যক্তিত্ব। সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারীয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর (রহ.) নাতি। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর সুপ্রিম পার্টিকে নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। এসব বিষয় নিয়ে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর সঙ্গে কথা বলেছেন রাজনীতি সংবাদের সম্পাদক সালাহ উদ্দিন সায়েম।
রাজনীতি সংবাদ: বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি নামকরণটা কীভাবে হলো?
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী: নামটা আমার মাথা থেকেই এসেছে। আমরা সুফিবাদে বিশ্বাসী। সুপ্রিমের সাথে সুফিবাদের একটা সম্পর্ক আছে। সুফিরা সবসময় শান্তি ও সমৃদ্ধির পক্ষে থাকে যার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সুফিরা হলেন সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ। আর সুপ্রিম অর্থ হলো সর্বোচ্চ বা সর্বোৎকৃষ্ট। সুপ্রিমের জায়গায় সুফিদের মানুষ কদর করে। এভাবে সুফি থেকে সুপ্রিম নামকরণটা করা হয়েছে।
প্রশ্ন: একতারা প্রতীকটা কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: আমরা প্রতীক চেয়েছিলাম আপেল। কিন্তু সেটা পাইনি। আর যেসব প্রতীক ছিল তা ভালো লাগেনি। তাই একতারা প্রতীকটা নিতে হলো। তবে একতারা প্রতীক সুপ্রিম পার্টির স্লোগানের সাথে মিলে গেছে। সুপ্রিম পার্টির স্লোগান হলো-ঐক্যের সাথে দেশ গড়ি। ঐক্যের মধ্যে এক আছে। আর একতারা এদেশের লোকসংস্কৃতির প্রতীক।
প্রশ্ন: আপনি একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও সুফি আলেম। কিন্তু আপনার দলের নামের মধ্যে ইসলাম কিংবা তরিকত শব্দ নেই কেন?
উত্তর: ধর্ম হলো বিশ্বাসের বিষয়, যা নিজের আমলের জন্য। ইসলাম নামের আগে লাগিয়ে বিক্রি করার বিষয় না। এ কারণেই ইসলামী দলগুলোর মানুষের কাছাকাছি যেতে পারছে না। আমরা তো দল করছি দেশ ও জাতির জন্য।
প্রশ্ন: আপনি তো ইসলামী ফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওই রাজনৈতিক দলটি ছেড়ে কেন পৃথকভাবে নতুন দল গঠন করলেন?
উত্তর: আমি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। একটা রাজনৈতিক দল গঠন করা আমার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল। এ কারণে ইসলামী ফ্রন্ট ছেড়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করার জন্য নতুন এই দলটি গঠন করেছি।
প্রশ্ন: আপনার ছোট ভাই ও দুই বোন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছিলেন যে, আপনি তাদের সম্পত্তি আত্মসাত করেছেন। এই অভিযোগটা কতটুকু সত্য?
উত্তর: আমার বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন তারা কখনো এই বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি কিংবা থানায় কোনো অভিযোগও করেননি। ছোট ভাই হলেও সে আমার বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমার বাবা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করেছিলেন। আমার বাবার যেসব প্রতিষ্ঠান ছিলো সেগুলোর দায়দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছেন। এর কারণে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু সে অভিযোগ ধোপে টেকেনি।
প্রশ্ন: অনেকে সৈয়দ নজিবুল বশরের নেতৃত্বাধীন ত্বরিকত ফেডারেশনকে মাইজভান্ডার দরবারের অনুসারীদের দল মনে করে থাকেন। এখন আপনার নেতৃত্বে সুপ্রিম পার্টি গঠনের ফলে মাইজভান্ডার দরবারের অনুসারীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে কিনা?
উত্তর: আমি তো কেবল আমার অনুসারীদের নিয়ে এই রাজনৈতিক দল গঠন করিনি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য সুপ্রিম পার্টি। আমার দলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, চাকমা ও মগ গোষ্ঠীর লোকও আছে। ত্বরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে আমার চিন্তাধারার তফাৎ আছে।
প্রশ্ন: ফটিকছড়িতে ত্বরিকত ফেডারেশন নাকি সুপ্রিম পার্টির অবস্থান শক্তিশালী?
উত্তর: ফটিকছড়িতে কার অবস্থান মজবুত, কার কত অনুসারী আছেন সেটা সেখানকার জনগণ বলবেন। আমি নিজের ঢোল নিজে পেটাতে চাই না।
প্রশ্ন: আপনি তো ১০টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিয়ে লিবারেল ইসলামী জোট করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। গত ১৩ মে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে জোটের ৯টি দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠকও করেছেন। এই জোট কখন আত্মপ্রকাশ করবে?
উত্তর: বিষয়টা এখনো প্রক্রিয়াধীন। সময় হলে জানতে পারবেন।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচার আছে, লিবারেল ইসলামী জোট হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত? এটা কি ঠিক?
উত্তর: আমরা এখনো কারো সাথে বসিনি। এই জোট কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটা আমরা এখনো নির্ধারণ করিনি। বিষয়টা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।
প্রশ্ন: সুপ্রিম পার্টি কি আগামী জাতীয় নির্বাচন এককভাবে করবে নাকি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে করবে?
উত্তর: আমরা কার সঙ্গে জোট করবো সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আমরা এখন এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনি তো ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফটিছড়ি আসনে ইসলামী ফ্রন্ট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আগামী নির্বাচনেও কি ফটিকছড়ি থেকে নিজ দলের প্রার্থী হবেন?
উত্তর: আগামী নির্বাচনে আমি ফটিকছড়িসহ তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশ্ন: সুপ্রিম পার্টি কি বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে?
উত্তর: আমাদের পক্ষে সংবিধানের বাইরে যাওয়া তো সম্ভব না। তবে আমি মনে করি, নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় হোক না কেন তা অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া উচিত। এলক্ষে রাষ্ট্রপতি সংলাপের আয়োজন করতে পারেন। আর যে কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন করা ঠিক নয়। বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে না এসে ভুল করেছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদেরকে এর খেসারত দিতে হয়েছে।
রাজনীতি সংবাদ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক নেতাদের সাক্ষাৎকার