শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা ক্যাম্পাস রাজনীতি

চমেক: অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে নওফেলের কর্মীবাহিনী, নাছির অনুসারীদের আধিপত্য খর্ব


নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৭ মে, ২০২১ ১০:৪৩ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে রাজনীতির মেরুকরণ পাল্টে গেছে। গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে। অন্য কোনো নেতার আধিপত্য ও অনুসারী ছিল না। কিন্তু সেই ক্যাম্পাস এখন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের একক নিয়ন্ত্রণে নেই। গত ১০ মাস ধরে চমেক ক্যাম্পাসে অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কর্মীবাহিনী। এতে ক্যাম্পাসে নাছির অনুসারীদের একক আধিপত্য খর্ব হয়ে গেছে।

গত ১০ মাস ধরে চমেক ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেখানে তিনি গড়ে তুলেছেন তার কর্মীবাহিনী।এতে ক্যাম্পাসে নাছির অনুসারীদের একক আধিপত্য খর্ব হয়ে গেছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ২০২০ সালের ২২ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর চমেক ক্যাম্পাসে তার কর্মীদের বলয় গড়ে ওঠে। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাছির ও নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে।

সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে চমেক ক্যাম্পাসে প্রথমে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিন ইন্টার্ন চিকিৎসক আহত হয়।

চমেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এসব ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আ জ ম নাছিরের অনুসারী। সংঘর্ষে লিপ্ত অপর পক্ষের নেতা-কর্মীরা হলেন নওফেলের অনুসারী।

এ ঘটনার জেরে চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে। গত ২ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিন দফা দাবি দিয়ে কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা কর্তৃপক্ষকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দেয়।

অপরদিকে এ ঘটনায় চমেক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতারা নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা করেন।

ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দিলেও তারা তিন দিন পর আর কোনো কর্মসূচি দেয়নি। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা দাবি করছেন, চমেক ক্যাম্পাসে এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নাছিরের অনুসারীরা।

চমেকের এই ঘটনার পর নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান দিচ্ছেন, চমেকের মাটি এখন নওফেলের ঘাঁটি।

অপরদিকে নাছিরের সমর্থক ছাত্রলীগ কর্মীরা চমেক ক্যাম্পাসে নওফেল অনুসারীদের বহিরাগত হিসেবে আখ্যায়িত করে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছেন।

আ জ ম নাছিরের অনুসারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগ নেতা ডা. উসমান গণি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে আ জ ম নাছিরের অবস্থান গত ৩৫ বছর ধরে। গত ১৫ বছর ধরে এখানে আ জ ম নাছিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কমিটি হচ্ছে। উপমন্ত্রী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর গুটিকয়েক কর্মী এখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতেছে। চেষ্টা এক জিনিস, সফলতা আরেক জিনিস। তারা চেষ্টা করতেই পারে কিন্তু কখনোই সফল হবে না।’

ডা. উসমান গণি বলেন, ‘বহিরাগতদের দিয়ে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা যায় কিন্তু আধিপত্য বিস্তার করা যায় না।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের বৈঠক রয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তারা আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করেছেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা হবে। যদিও আমরা দেখছি, তারা আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। হয়তো আমরা কাল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারি।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী চমেক ছাত্রলীগ নেতা কে এম তানভীর বলেন, ‘চমেক ক্যাম্পাসে আমাদের এখন ৯০ জন সক্রিয় কর্মী রয়েছেন। এখানে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান এখন অত্যন্ত শক্ত।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চমেক ক্যাম্পাসে আ জ ম নাছিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কমিটি করা হাস্যকর বিষয়। ছাত্রলীগের কমিটির করার এখতিয়ার আ জ ম নাছিরের নেই। এখানে কমিটি করার এখতিয়ার একমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। সামনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চমেক ক্যাম্পাসে কমিটি ঘোষণা করবে।’

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রসঙ্গে কে এম তানভীর বলেন, ‘এই ঘটনাটা ঘটেছে ছাত্রলীগের মধ্যে। হাসপাতালে তো কিছু হয়নি। তাহলে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কেন আন্দোলন করবে? চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়শেন একটি অবৈধ সংগঠন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো অনুমোদন দেয়নি। তারা দোকান ও অ্যাম্বুলেন্স থেকে চাঁদাবাজি করার জন্য এই সংগঠন গড়ে তুলেছে।’

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা করছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দুই পক্ষের মধ্যে সহাবস্থান না হলে সেখানেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিনিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষ লেগেই থাকবে।

আরও খবর:

চমেক হাসপাতাল: কর্তৃপক্ষকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

 

আরও পড়ুন:

https://rajnitisangbad.com/2021/04/29/%e0%a6%9a%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%95-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%a4%e0%a6%a6/

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর