রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

কক্সবাজারে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ নিয়ে আরএফ বিল্ডার্সের প্রতারণার ফাঁদ


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ জুলাই, ২০২৩ ৯:৩৫ : অপরাহ্ণ
হোটল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট
Rajnitisangbad Facebook Page

কক্সবাজারে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে আরএফ বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচের মালিকানা হস্তান্তর না করার অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজারের কলাতলী ডলফিন মোড়ে সড়কের দক্ষিণ পাশে গড়ে উঠেছে এই হোটেল।

হোটেলটি শেয়ারহোল্ডাদের কাছে হস্তান্তর না করে তৃতীয় একটি পক্ষকে পরিচালনার জন্য অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরএফ বিল্ডার্সের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রির্সোট ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতাদের দাবি, আরএফ বিল্ডার্সের কাজ ছিল হোটেলটি তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও হোটেলটি হস্তান্তর করেননি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার। উল্টো নিজেই কৌশলে মালিক সেজে হোটেলটি একাধিকবার বিভিন্নজনকে অগ্রিম অর্থের বিনিময়ে পরিচালনা করতে দিচ্ছেন তিনি। ফলে হোটলটির যারা প্রকৃত মালিক তারাই এখন ভাড়াটিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের কলাতলী ডলফিন মোড়ে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টটি প্রায় ৫০ কাটা জমির উপর অবস্থিত। হোটেলটিতে কক্ষের সংখ্যা ৩৭৪টি। আর মালিক আছেন আড়াইশ জনের উপরে। হোটেলটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। আর নিমার্ণের দায়িত্বে ছিল আরএফ বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি অনুযায়ী, ২০১২ সালে হোটেলটি তৈরি করে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও অধিকাংশ মালিক এখনও হোটেলটির নিজের অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

আরএফ বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ, রেজিস্ট্রেশন করার সময় বিভিন্ন অজুহাতে শেয়ারহোল্ডার থেকে প্রতিটি কক্ষের বিপরীতে ২০ শতাংশ বেশি অর্থ আদায় করা হয়েছে। ৫টি লিফট দেওয়ার কথা থাকলেও একটি কম দেয়া হয়েছে; আর দুইটি লিফট নিম্নমানের। সুইমিং পুল, বৈদ্যুতিক, পানির লাইন শেয়ারহোল্ডাদের কাছে হস্তান্তর না করে আরএফ বিল্ডার্সের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন নিজের কাছে রেখেছেন। ৩২টি কার পার্কিং দেওয়ার চুক্তি থাকলেও সেখানে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০টি। হোটেলের হল কক্ষে শেয়ারহোল্ডারদের মিটিং করতে দেওয়া হয় না। এছাড়া ওনার্স এসোসিয়েশন সভা করলেও সেখানে আরএফ বিল্ডার্সের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত থাকেন না।

অভিযোগ উঠেছে, ২০১৭ সালে যখন দলিল করা হয়, তখন হোটেলের মালিকানা থাকবে শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। কিন্তু দলিলে স্বাক্ষর নেওয়ার সময় ১৩ নং পাতায় কৌশলে ‘ওয়ার্ল্ড বিচ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি’ নামের একটি অংশ জুড়ে দেয়া হয়। ওই কোম্পানি হোটেলটি পরিচালনা করবে সেটা যুক্ত করে দেয়া হয়। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান হাজী দেলোয়ার ও পরিচালক তার সন্তানরা। অথচ ২০১০ সালের চুক্তিতে উল্লেখ ছিল শেয়ারহোল্ডাররা হোটেলটি পরিচালনা করবেন। হাজী দেলোয়ার শেয়ারহোল্ডারদের সাথে কৌশলে প্রতারণা করেছেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এখন হাজী দেলোয়ার বিভিন্নজনকে মোটা অর্থের বিনিময়ে হোটেলটি পরিচালনার দায়িত্ব দিচ্ছেন। ফলে হোটেলে নানা সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে হোটেলের। অথচ তিনি কোন মালিক নন; একজন ডেভেলপার মাত্র।

শেয়ারহোল্ডাররা হোটেলটির পরিচালনা ফিরে পেতে চাইলে তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে বলে একাধিকবার জেলা পুলিশ, এমপি ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারা।

হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন (অব.) শহীদ উদ্দিন মাহবুব একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আরএফ বিল্ডার্সের কাজ হোটেলটি তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে হস্তান্তর করা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মালিক হাজী দেলোয়ার দাপ্তরিকভাবে সেটা করছেন না। এছাড়া তিনি হোটেলটি মালিক সেজে একাধিক ব্যক্তি থেকে অগ্রিম অর্থ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, শেয়ারহোল্ডাদের যখন দলিল পড়ানো হচ্ছিলো, তখন হোটেলটি ‘ওয়ার্ল্ড বিচ ডভেলপমেন্ট কোম্পানি’ পরিচালনা করবে সেটা উল্লেখ ছিল না। স্বাক্ষর করার সময় কৌশলে একটি পৃষ্টা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর সাব কবলায় কোন শর্ত জুড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ তিনি জালিয়তি করে সেটা করেছেন।

শহীদ উদ্দিন মাহবুব বলেন, তিন-চার মাস আগেও আরএফ বিল্ডার্সের মালিক হাজী দেলোয়ার তৃতীয় পক্ষ মেজর দেলোয়ার নামের এক ব্যক্তিকে হোটেলের ২০০টি কক্ষ ভাড়া দেন। হাজী দেলোয়ার ও মেজর দেলোয়ার মিলে হোটেলের রিসিপশন দখলসহ হোটেল মালিকদের আর্থিকভাবে ক্ষতি করছেন। বিষয়টি হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনক, জেলা পুলিশ সুপার, স্থাানীয় সংসদ সদস্য (কক্সবাজার-৩) সাইমুম সরওয়ার কমল, মেজর দেলোয়ার ও অভিযুক্ত হাজী দেলোয়ারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এরপর হাজী দেলোয়ার নানা বাহানায় হোটেলটির মালিকপক্ষকে হস্তান্তর করছেন না। আমরা মালিক হয়েও এখন ভাড়াটিয়া।

আরএফ বিল্ডার্সের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সাব কবলা যদি জাল হয়, তাহলে সেটা সংশোধনের জন্য রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করার সুযোগ আছে। আর আমি দলিলে কৌশলে যদি একটি পৃষ্টা যুক্ত করে থাকি, তাহলে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা তো মুর্খ নন। সবাই শিক্ষিত। এখন মুর্খের মতো কথা বললে তো হবে না। আমার কাছে সরকার নিবন্ধনকৃত দলিল আছে। সে অনুসারে আমি সবাইকে তাদের কক্ষ বুঝিয়ে দিয়েছি। আর রেজিস্ট্রেশন করার সময় অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। তারা সবকিছু দেখে শুনে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছেন।

তিনি বলেন, এখানে জোর করে কিংবা কৌশলে মালিকানা ছিনিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। দলিল যার তিনিই মালিক। মুখে বললাম আমি মালিক, সেটা কোনোভাবে সম্ভব নয়। রেজিস্ট্রেশন করছে আমি হোটেলের কক্ষ হস্তান্তর করিনি-এমন একজনকেও দেখাতে পারবেন না।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর