চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়িতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার সকালে নগরীর কোতোয়ালী থানায় এসব মামলা দায়ের করা হয়।
এসব মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ ২৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চারটি মামলার মধ্যে প্রথমটি হলো কাজীর দেউড়ি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও টিআইকে মারধরের অভিযোগ, দ্বিতীয়টি হলো, আদালতে আসার পথে মিরসরাই থানা পুলিশের গাড়িতে হামলা ও মারধরের অভিযোগ, তৃতীয়টি হলো পুলিশকে মারধর ও সরকারী কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে চতুর্থ মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলা দায়ের হওয়ার পর গতকাল রাতে পুলিশ ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের বাসায় পৃথক অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের এ দুটি অভিযান ছিলো নিস্ফল।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে আবুল হাশেম বক্করের নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তখন তিনি বাসায় ছিলেন না।
আবুল হাশেম বক্করের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রাজনীতি সংবাদকে জানিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর রাতে বাসায় ফিরেননি বক্কর। পুলিশ বাসায় এসে তল্লাশি চালিয়ে চলে যায়।
এরপর রাত ১২টার দিকে ডা. শাহাদাত হোসেনের নগরীর ওয়ার সিমেট্রি এলাকার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু শাহাদাতের বাসায় তন্ন তন্ন করে তল্লাশি করেও শাহাদাতের সন্ধান পায়নি পুলিশ।
আবুল হাশেম বক্করের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে মামলা হওয়ার পরও মোবাইল ফোন খোলা রয়েছে ডা. শাহাদাত হোসেনের।
তিনি রাজনীতি সংবাদকে অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ পরিকল্পিতভাবে বিএনপি নেতাদের মামলায় জড়াতে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। কাজীর দেউড়ি মোড়ে সংঘর্ষের সময় আমরা ছিলাম পার্টি অফিসের সামনে মঞ্চে। আমাদের কেন মামলায় জড়ানো হলো? আর পুলিশের এ ঘটনা যে পরিকল্পিত ছিল তার প্রমাণ হলো, মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে।’
ড. শাহাদাত হোসেন প্রশ্ন রাখেন, ‘মামলা হলেও পুলিশ সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া কারো বাসায় কীভাবে অভিযান চালাতে পারে? আর আমার বাসায় মহিলা ছিল। অথচ অভিযানের সময় কোনো নারী পুলিশ ছিল না। এটা পুলিশের সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ।’
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ধর্তব্য অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযান চালাতে সার্চ ওয়ারেন্ট লাগে না।’
শাহাদাত ও বক্করের বাসায় গভীর রাতে অভিযানে নারী পুলিশ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বিএনপির মিছিলে পুলিশের বাধা, সংঘর্ষ, গুলি
এর আগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।
বিকেল ৩টার দিকে কাজীর দেউড়ি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যুবদলের নেতাকর্মীরা নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে যাওয়ার পথে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।
তখন পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় পুলিশ বিএনপি রেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে কাজীর দেউড়ি মোড়ে গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশকে মারধর করা হয়।
একপর্যায়ে পুলিশের বহনকারী একটি গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপির ২০ নেতাকর্মী আহত হন। সংঘর্ষের পরে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।