চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অর্থে নির্মিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব সিটি করপোরেশনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুসফিক আল মাসুম ও বাইত উল্লাহ বায়াত।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০০২ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জমিতে রাষ্ট্রের ৪২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি পারিবারিক সম্পদে রূপান্তরিত করেন সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ছাত্র ও গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাবা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা অতি দ্রুত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনসহ সাত দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো-বিগত সময় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্বক স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসি আইন ২০১০ অনুসরণ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে যারা প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে নিন্দনীয় হামলা চালিয়েছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বাসনে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করা, সংস্কারপন্থী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধকারী এবং হত্যার হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্র ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাসুদের পরিবারের তিন সদস্য, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ পুরো ট্রাস্টি বোর্ড আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা দখলে রেখেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় লুটেপুটে খাবেন সেটি হতে দেওয়া যায় না।
উপাচার্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দেশজুড়ে চলমান ভিসি বিরোধী অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চাইনি সে জন্য পরবর্তী সময়ে সম্মানের সঙ্গে ভিসি মহোদয়কে আমরা একটি ডাকযোগে নিবেদন জানাই, আমরা স্যারকে সব পরিস্থিতি বিবেচনায় পদত্যাগের আহ্বান জানাই। তিনি পদত্যাগ করবেন কি করবেন না তা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু এ আহ্বানকে পুঁজি করে নিয়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যা আহ্বানকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে কখনোই কাম্য ছিল না। আমরা কখনোই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। আমরা অবস্থান করছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। যে বা যারা ছাত্র-জনতার ওপর বর্বরতা চালিয়েছে আমাদের অবস্থান তাদেরই বিপক্ষে। পরবর্তীতে এ বিষয়কে পুঁজি করে নিয়ে পরাজিত ফ্যাসিবাদের চিহ্নিত নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে চিঠি প্রেরণকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, উপাচার্যসহ ট্রাস্টি বোর্ড বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র থেকে লুট করা টাকা দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমন করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন উপাচার্যের দৌহিত্র, অনিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রবিষয়ক পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মুসফিক আল মাসুম, বাইত উল্লাহ বায়াত, আসাদ, মাওয়াজ, হাসান ইকবাল, বেলাল, ব্যবসা প্রশাসনের শিক্ষার্থী ফারহাদুল ইসলাম, নুরুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।