রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই, খোলা মনের মানুষ: শেখ হাসিনা


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ৬:১৭ : অপরাহ্ণ
আজ বিকেলে গণভবনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Rajnitisangbad Facebook Page

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। আমি কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করিনি। আমি খোলা মনের ও খুব উদারপন্থি মানুষ।’

আজ সোমবার গণভবনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের নির্বাচন একটা যুগান্তকারী ঘটনা। নির্বাচন নিয়ে এত আগ্রহ আগে কখনো দেখিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। সব সময় চেষ্টা ছিল নির্বাচন সুষ্ঠু করার। এই বিজয় জনগণের বিজয়। নির্বাচন যে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি।’

আরও পড়ুন:

নির্বাচনী নাটকের রহস্য বিশ্বের কাছে উন্মোচিত হয়েছে: মঈন খান

সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে সেই জিতেছে: জি এম কাদের

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের একজন প্রশ্ন করেন, নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি পাঁচবার ক্ষমতায় এলেন। এর মাধ্যমে আপনি ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, বেনজীর ভুট্টো, গোল্ডমেয়ার ও মার্গারেট থ্যাচারকে ছাড়িয়ে গেছেন। আপনার এই বিজয় উদযাপনের অংশ হিসেবে আপনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমা করার কথা বিবেচনা করবেন কি না?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যখন দেশ পরিচালনা করছেন তখন আপনি নারী নাকি পুরুষ এটা নিয়ে ভাবা উচিত নয়। আমি আমার দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। নারী হিসেবে আমি জনগণকে মাতৃস্নেহের সঙ্গে দেখি। আপনি যে নারী নেত্রীদের নাম নিয়েছেন তারা মহান ছিলেন। আমি তাদের মতো নই। আমি একজন খুব সাধারণ মানুষ। তবে আমি সবসময় মানুষের প্রতি আমার কর্তব্যের কথা অনুভব করি। আমাকে তাদের সেবা করতে হবে।’

ড. ইউনূসের প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শ্রম আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। তিনি তার নিজের কোম্পানির যাদের বঞ্চিত করেছেন তারাই মামলা করেছেন। তিনি শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই। তাই তাকে ক্ষমা করার প্রশ্ন আমার কাছে আসা উচিত নয়। তার নিজের কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি।’

ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের মহৎ বন্ধু। ১৯৭১ সালে তারা আমাদের সমর্থন করেছে। পঁচাত্তরের পর তারা আমাকে ও আমার বোনকে আশ্রয় দিয়েছে। ঘরের পাশের প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক সমস্যা থাকলেও আমরা তা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করেছি। প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’

আগামী পাঁচ বছর বহির্বিশ্বের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক প্রত্যাশা করছেন-এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, অর্থনৈতিক উন্নতি, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে আমরা সব ধরনের কাজও শুরু করেছি। এটা আমরা পূরণ করতে চাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম ভোট পড়ার ব্যাপারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয় নিয়ে মার্কিন একজন পর্যবেক্ষকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এটা এখন আপনাদের সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’

আরও পড়ুন: ভোটের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। আমি কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করিনি। আমি খোলা মনের ও খুব উদারপন্থি মানুষ। দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলো স্বাধীনভাবে কথা বলতে ও লিখতে পারে। তারা তাদের কাজ করতে পারে, আমি কখনো হস্তক্ষেপ করি না। যখন কেউ সমালোচনা করে তখন তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে শোধরানো যায়, আমি এভাবেই দেখি।’

বিবিসির এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি ২০১৮ সাল থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সঙ্গে সংলাপ করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে আপনি গতকাল নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। ৬০ শতাংশ মানুষ ভোটদানে বিরত ছিলেন। মানুষের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কারণে মানবাধিকার সংস্থাগুলো আপনার সরকারের সমালোচনা করেছে। এই অবস্থায়, বিশেষ করে কোনো বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী হবে?

এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেক দলের নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অর্থ এই নয় যে গণতন্ত্র নেই। জনগণের অংশগ্রহণ ছিল কিনা এটা বিবেচনা করতে হবে। আপনি যেই দলের কথা উল্লেখ করলেন তারা কী করেছে? কিছুদিন আগেই তারা আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। তাদের দেওয়া আগুনে ট্রেনে মায়ের কোলে শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এটা কি গণতন্ত্র? হ্যাঁ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সাধারণ মানুষকে হত্যা করা কোনো রাজনীতি নয়। এটা শুধুই সন্ত্রাস। এটা শুধুমাত্র একটা ঘটনা নয়, বহুবার এমনটা ঘটেছে। মানুষ এটা গ্রহণ করে না। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই দলটি (বিএনপি) নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা মানুষকে ভোটদানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মানুষ তাদের কথা শোনেনি।’

আরও পড়ুন: ভোট বর্জন করায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানালো বিএনপি

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর