শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রাম-১০ আসনের এমপি আফছারুল আমীন মারা গেছেন


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২ জুন, ২০২৩ ৪:২১ : অপরাহ্ণ
ডা. আফছারুল আমীন
Rajnitisangbad Facebook Page

তিন বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রামের প্রবীণ এই রাজনীতিক।

গত ১৫ দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

আফছারুল আমীনের ছোট ছেলে মাহিদ উল আমীন দেশ বর্তমানকে জানান, গুরুতর অসুস্থ আফছারুল আমীনকে শুক্রবার সকালে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। বিকেলে তিনি মারা যান।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আফছারুল আমীন গত তিন বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ওই বছরের ২৩ এপ্রিল তিনি সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেন। এরপর থেকে তিনি দেশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারেননি।

শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে আফছারুল আমীনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

জানাজা শেষে তার মরদেহ হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে। আছরের নামাজের পর জমিয়তুল ফালাহ মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর বাদে এশা নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীতে পিএস আমীন স্কুল মাঠে তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীর বাসিন্দা আফছারুল আমীন রাজনীতিতে আসার আগে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তার বাবা ফজলুল আমীনও ছিলেন একজন চিকিৎসক। নগরীর দেওয়ানহাট মোড়ে চেম্বার খুলে নিয়মিত রোগী দেখতেন ডা. আফছারুল আমীন।

১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর তিনি পান নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব।

১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন চট্টগ্রাম-৮ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দুই দফা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে হেরে যান ডা. আফছারুল আমীন। কিন্তু এরপরও হাল ছাড়েননি তিনি।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে হালিশহর, পাহাড়তলী ও খুলশী নতুন সংসদীয় আসনে চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনে তৃতীয় বারের মতো প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বাজিমাত করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁর কাছে পরাস্ত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।

এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে নৌ পরিবহন মন্ত্রী করা হয়। এরপর তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সবশেষ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আফছারুল আমীন প্রয়াত নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষার আন্দোলন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ‘অসহযোগ আন্দোলন’সহ বিভিন্ন সংগ্রামে তিনি মহিউদ্দিনের সঙ্গে ভূমিকা পালন করেন।

রাজনীতির ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষাখাতেও অবদান রেখেছেন আফছারুল আমীন। নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে ‘প্রাণহরি আমীন একাডেমি’। এই একাডেমির অধীনে এবং এর বাইরেও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

আফছারুল আমীনের দুই সন্তানের মধ্যে ফয়সাল আমীন পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং ছোট ছেলে মাহিদ উল আমীন বাবার মতোই চিকিৎসক। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে আছেন তিনি।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর