টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান। সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাবর আজমের দল।
বাংলাদেশের জন্য সেমিফাইনালের পথটা সহজ করে দিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে পাকিস্তানকে হারালেই শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। এমন সমীকরণের ম্যাচে হতাশ করলো টাইগাররা।
আজ রোববার অ্যাডিলেড ওভালে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১২৭ রান তুলে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪৮ বলে তার ইনিংসে ছিল সাতটি বাউন্ডারি।
জবাবে ১৮. ১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরুর আভাস দেন দুই ওপেনার শান্ত ও লিটন দাস। কিন্তু আভাস দিয়েও জুটি বড় করতে পারলেন না। ২১ রানে ভাঙে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন (১০)।
লিটনকে হারানোর চাপ সৌম্যকে নিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন শান্ত। এই জুটি থিতু হয়ে যায়। দুজনে মিলে খেলেন ৪৭ বল।
কিন্তু রান তোলায় দুজনেই ছিলেন মন্থর। হারিস রউফ-নাসিম শাহদের বোলিং দাপটে উইকেটে ভুগছিলেন দুজন। এর মধ্যে ২০ রান করে বিদায় নেন সৌম্য। ১১তম ওভারে ভাঙে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জুটি।
এরপর উইকেটে আসা সাকিবের সঙ্গে যা হলো সেটা ছিল অবিশ্বাস্য! আম্পায়ারের বিস্ময়কর বাজে সিদ্ধান্তে এলবি দেওয়া হয় সাকিবকে।
শাদাব খানের বলে সাকিবের প্রথম বল মোকাবিলাতেই আউট দেন আম্পায়ার। আত্মবিশ্বাসী সাকিব রিভিউ নিতে দেরি করেননি।
শান্তকে জানান দেন, তার ব্যাটে লেগেছে বল। টিভি রিপ্লেতেও ব্যাটে-বলের স্পর্শ দেখা যায়। কিন্তু আম্পায়ার সেটা আমলে নিলেন না। তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন।
হতাশ হয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
সাকিবের এই আউট নিয়ে টিভি ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান স্পষ্ট বলেন, ‘আমি আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্তে মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারছি না। এটা ঠিক হয়নি। স্পষ্ট বল প্যাডে লাগার আগে সাকিবের ব্যাট স্পর্শ করেছিলো।’
দলীয় ৭৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এতে ম্যাচের মোমেন্টাম পেয়ে যায় পাকিস্তান।
সাকিব ফেরার পর বাকিরাও আশা দেখাতে পারেননি। হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে উইকেটে ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দেন শান্ত।
কিন্তু থিতু হয়ে যাওয়া ব্যাটার কিছুই করতে পারেননি। ৪৮ বলে ৫৪ রান করে বিদায় নেন শান্ত।
এরপর শুধু হতাশাই দেখেছে বাংলাদেশ। একে একে সাজঘরের পথে হাঁটেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত-নুরুল হাসান সোহানরা।
এতো উইকেট হারানোর মিছিলে বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত থামে অল্প রানে।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন রিজওয়ান। কিন্তু কিপার নুরুল হাসান সোহান এই সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন। জীবন পাওয়ার পর ওপেনিং জুটিতে ৫৭ রান তোলে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ১১তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন নাসুম। ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানি অধিনায়ককে। ৩৩ বলে ২৫ রান করে বিদায় নেন বাবর।
এরপর রিজওয়ানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে খেলায়া ফেরান ইবাদত। ৩২ রান করে ফেরেন রিজওয়ান। দুই ওপেনার ফিরলেও জয় পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি পাকিস্তানের। ১১ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাবর আজমের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৭/৮ (শান্ত ৫৪, লিটন ১০, সৌম্য ২০, সাকিব ০, সৈকত ৫, আফিফ ২৪, নাসুম ৭, সোহান ০, তাসকিন ১, মুস্তাফিজ ০ ; শাদাব ৪-০-৩০-২, নাসিম শাহ ৩-০-১৫-০, শাহিন ৪-০-২২-৪, হারিস ৪-০-২১-১, ইফতেখার ৩-০-১৫-১)।
পাকিস্তান: ১৮. ১ ওভারে ১২৮/৫ (রিজওয়ান ৩২, বাবর ২৫, নওয়াজ ৪, হারিস ৩১, শান মাসুদ ২৪, ইফতেখার ১, শাদাব ০; নাসুম ৪-০-১৪-১, তাসকিন ৩-০-২৬-০, ইবাদত ৩-০-২৩-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২১-১, সাকিব ৪-০-৩৫-১)।
ফল: ৫ উইকেটে জয়ী পাকিস্তান।