চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার আগ থেকে ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। কমিটির কাঙ্ক্ষিত পদ বাগিয়ে নিতে তদবির করতে করতে ঘাম ঝরছে নেতাদের।
দলীয় সূত্রের খবর, চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যাশী তিন নেতা একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তদবিরে কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন।
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির নেতারা বলছেন, তিন নেতা যেন সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন!
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটির শীর্ষ পদ পেতে সব নেতারা তদবিরে ভরসা করলেও ব্যতিক্রম আছেন একজন।
তিনি হলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কোনো প্রকার তদবির ছাড়াই!
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়াটা ছিল ৫২ বছর বয়সী রাশেদুল আলমের জীবনের সেরা চমক!
সেই চমকের কথা তিনি জানালেন রাজনীতি সংবাদের কাছে।
রাশেদুল আলমের কথায়- ‘‘২০১৯ সালে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচনে শখের বশে প্রার্থী হতে ইচ্ছা হয়েছিল। তাই এমনে দলের মনোনয়ন ফরম একটা নিয়েছিলাম। আরও চারজন সিনিয়র নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আমি ছিলাম সবার শেষে, পাঁচ নম্বরে। প্রার্থী হওয়ার পর আমি কোনো নেতার কাছে গিয়ে তদবির করিনি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে যখন সালাম দিতে গিয়েছিলাম তিনি আমাকে বললেন, ‘এই তোর জন্য তো আমি সুপারিশ করিনি।’ উনার কথা শুনে আমি বিন্দুমাত্র হতাশ হইনি। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে আমার জন্য তদবির করতে বলিনি।’’
এ যুবলীগ নেতা বলেন, ‘২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আমি যখন গণভবনে পৌঁছি, তখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হয়ে গেছে। গণভবনে বসে নেতাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন মোবাইলে আমাকে মেসেজ পাঠালেন-অভিনন্দন! আমি তখনও বিশ্বাস করিনি। কারণ আমি চিন্তা করেছি, আমার চেয়েও সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে আমাকে কি প্রার্থী করবে! পরে রাতে দেখি, প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়। এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চমক।’
রাশেদুল আলম বলেন, ‘পরে খবর নিয়ে জানতে পারি তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাই আমার সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পজিটিভ রিপোর্ট দিয়েছেন। যে কারণে চার প্রার্থীকে বাদ দিয়ে আমাকে বেছে নেওয়া হয়।’
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতো উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদেও তদবির ছাড়াই বাজিমত করতে চান দীর্ঘ ৪০ বছর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই নেতা।
আগামী ২৯ মে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী আছেন ৭ জন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আছেন ২১ জন।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের মে মাসে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত ওই কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এস এম রাশেদুল আলম। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া এস এম শফিউল আজম জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাওয়ার কারণে যুবলীগের নেতৃত্ব ছেড়ে দেন। এরপর কেন্দ্র থেকে রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।’
এবার যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স পাস করা রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমি গত ৯ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা কোনো অপকর্মের অভিযোগ কেউ তুলতে পারবে না। আমার বিরুদ্ধে কোনো বদনাম না থাকার কারণেই তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা আমাকে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে অনুরোধ করেছেন। তারা অনুরোধ না করলে আমি প্রার্থী হতাম না। ব্যক্তিগতভাবে সভাপতি পদের জন্য আমার তেমন কোনো আগ্রহ নেই।’
তাহলে কি পদের জন্য কোনো তদবির করছেন না?
এ প্রশ্নের জবাবে রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমি যে সভাপতি প্রার্থী এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথাই নেই। কারণ আমার নিজের প্রতি শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। কাজেই আমার তদবিরের কোনো প্রয়োজন নেই। যাদের নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নেই তারাই তদবির করে।’
সম্মেলনে ভোটাভুটি হলেও নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আপনি শতভাগ আশাবাদী?
এ প্রশ্নের উত্তরে রাশেদুল আলম বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা সম্মেলনে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৭ উপজেলার ১৭৫ ও জেলার ৭১ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন। ভোটাভুটি হলেও সভাপতি পদে আমি নির্বাচিত হবো-সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।’
রাশেদুল আলম জানান, তিনি ১৯৮২ সালে নগরীর নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা মামুনুর রশিদ মামুনের হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তখন নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক হন। পরে ১৯৯৭ সালে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি।
আরও পড়ুন: বাবরের নাম শুনলে মানুষ কেন আতঙ্কিত হয়?