নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) হুমকি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা।
এসপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘এসপি, তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো। কাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখাও? তোমাকে সাবধান করিয়ের (করছি)। আমাদের কাছে অস্ত্র নেই, কিন্তু কিল আছে। নোয়াখালীর মানুষ কিল কয়। কিল মানে মানুষ আছে, মানুষসহ নেমে তোমার এই গদি আমরা ভেঙে দিবো। তুমি এই নোয়াখালী থেকে যাতে সম্মান নিয়ে না যেতে পারো, সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।’
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও চর কাঁকড়া ইউনিয়নে তার (মির্জা) ঘোষিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বাদলকে (৪২) গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
তাকে গ্রেপ্তারের পর কাদের মির্জার অনুসারীরা রাত ৯টার দিকে বসুরহাট ও টেকেরবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নিজামের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিজের অনুসারীকে গ্রেপ্তারের পর ফেসবুক লাইভে এসে ফুঁসে উঠেন মেয়র কাদের মির্জা।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার লাইভে তিনি বলেন, ‘এই এসপি, যেই এসপি, যার কোনো জেলাতে চাকরি ছিল না। আজকে ষড়যন্ত্র করে তাকে এখানে পাঠিয়েছে, আমার কর্মীদের নির্মূল করার জন্য। সে আজকে রবিউলকে (ডিবির পরিদর্শক) দিয়ে আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করিয়েছে। তার গায়ের ওপর যদি একটা আঙুল দেওয়া হয়, তাহলে পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে।’
কাদের মির্জা বলেন, আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করি না। আমি রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। আমি জেল খেটেছি ১৯৮২ সাল থেকে, বারবার। আমি ডিএস সমমর্যাদার প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মেয়র।’
কাদের মির্জা পুলিশ সুপারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘কাকে ভয় দেখাস? তোর কতো বড় সাহস। তোর গুন্ডা ওসি লাগিয়ে আজকে কোম্পানীগঞ্জে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছো। কী করবি, গ্রেপ্তার? তোর কাছে অস্ত্র আছে, আমাদের কাছে লাঠি আছে। কার হুকুমে তুমি গতকালকে আমার এবং আমার দুই কর্মীর ছবি এখানে ওসির কাছে পাঠিয়েছো? আমাদের গ্রেপ্তার করার জন্য, এ সাহস তোমাকে কে দিয়েছে? ওবায়দুল কাদের? সে তো কথায় কথায় কসম কাড়ে আর মিথ্যা কথা বলে।’
মেয়র কাদের মির্জা বলেন, ‘পুলিশের এত বড় ঔদ্ধত্য, মন্ত্রীর এলাকায় নৈরাজ্য। বরিশালে এত বড় ঘটনা ঘটল, পাঁচ দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। আমরা তো কারও আত্মীয়ও হতে পারলাম না। আমাদের অভিভাবক নাই। আমাদের এলাকায় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মতো নেতার জন্ম হয় নাই। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। এখানে আজ ইউএনও, এসি ল্যান্ড যেভাবে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে লুটপাট শুরু করেছে। আজকে এসপি এসে একরাইম্যার (নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী) থেকে অর্থ নিয়ে আমার কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার শুরু করেছে, আজকে কাকে বলবো? কে শুনবে? কী চলছে এগুলো।’
বড় ভাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে কাদের মির্জা বলেন, ‘সবাই বলে আমার প্রতিপক্ষদের আপনি লাগাই রাখছেন। এখনো তাদের উৎসাহ জোগান। আমারে কন (আমাকে বলেন)-আল্লার কসম তাদের সাথে আমার দেখা হয় না। হায়রে মিথ্যুক। একজন মন্ত্রী, একটা দলের দুই বারের সেক্রেটারী। এভাবে মিথ্যাচার করেন আপনি। আপনি মনে করছেন আপনাকে ভয় পাই। আপনি জেলে দিবেন, মেরে ফেলবেন, মারিতো ফালাইছেন। চার বার আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে আমাকে মারার চেষ্টা করছে। আপনি বিচার করেননি। পুলিশকে দিয়ে ভিন্ন খাতে নিছেন।’
এ বিষয়ে নোয়াখালীল পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ফেসবুক লাইভে দেওয়া কাদের মির্জার বক্তব্য তিনি শুনেছেন। তবে পুরো বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।