আর ১০ দিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ভার্চুয়ালি সম্মেলন। চট্টগ্রাম নগরে ২০ বছর আগে সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি হয়েছিল। সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানো এবং নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চট্টগ্রাম মহানগরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথমবারের মতো সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে কেন্দ্র। তবে সম্মেলন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা! সম্মেলনের আগে চট্টগ্রাম নগরের নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত করে ফেলেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা।
আগামী ১৯ জুন সকাল ১০টা থেকে নগরীর লালখান বাজার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ত্রি-বার্ষিক এই সম্মেলন শুরু হবে। এর আগে দুই দফা গত ১১ এপ্রিল ও ২৯ মে সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে সরকারী বিধিনিষেধের মধ্যে চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভার্চুয়ালি সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের ভার্চুয়ালি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে যুক্ত হবেন। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
২০০১ সালের ১৪ জুলাই নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছিল। এটি ছিল মহানগরে সংগঠনটির প্রথম কমিটি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও গত ২০ বছরেও চট্টগ্রাম মহানগরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হয়নি।
২০ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সম্মেলনের প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। সম্মেলনকে ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কাও করছেন আয়োজকরা।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সম্মেলনের দিন দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলেও কমিটি ঘোষণা হবে কিনা সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে আমরা কৌশল অবলম্বন করবো। হয়তো সম্মেলনের দিন ঘোষণা হবে, না হয় পরদিন হবে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি। এ লক্ষে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সম্মেলনস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া তৎপরতা থাকবে।
১০১ সদস্যের কমিটির জন্য ৪৩১ জনের বায়োডাটা কেন্দ্রে
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্ব কাদের হাতে যাচ্ছে, তা নিয়ে শুধু স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়, আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও কৌতূহল দেখা দিয়েছে। সম্মেলনের সূচি ঘোষণার পর থেকে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। শীর্ষ পদে পেতে তারা মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে গিয়ে তদবির করছেন।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন জানান, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এবার ১০১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের নিয়ে গঠিত সাবজেক্ট কমিটি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। সাবজেক্ট কমিটি গঠনের জন্য নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১৫ থানা থেকে তিনজন করে কাউন্সিলর নির্বাচন করা হবে।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান রাজনীতি সংবাদকে জানান, ১০১ সদস্যের কমিটির জন্য ৪৩১ জনের বায়োডাটা জমা পড়েছে কেন্দ্রে। তবে কমিটির শীর্ষ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়াই করছেন কয়েকজন নেতা।
দলীয় সূত্রের খবর, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ (আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল) থেকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা দুই পক্ষের দুই নেতাকে এই বার্তা দিয়েছেন।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় দেবু ও হেলাল
সম্মেলনের সূচি ঘোষণার পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অনেক পদপ্রত্যাশী নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এদের মধ্যে ওমরগণি এমইএস কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেবাশীষ নাথ দেবু, সিটি কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাদেক হোসেন পাপ্পু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.সালাহউদ্দিন, সিটি কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. হেলাল উদ্দিন এবং ইসলামিয়া কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান আজিজের নাম আলোচনায় আসে।
এদের মধ্যে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে আবুল হাসনাত মো. বেলাল, হেলাল উদ্দিন, মো. সালাহউদ্দিন ও আজিজুর রহমানের নাম।
দলীয় সূত্রের খবর, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হলেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ দলের বিভিন্ন শীর্ষ নেতাদের কাছে গিয়ে তদবির করেছেন।
কিন্তু এদের মধ্যে শেষ মুহূর্তে নানা সমীকরণে কেন্দ্রে শীর্ষ দুটি পদের জন্য জোরালো আলোচনায় আছেন দেবাশীষ নাথ দেবু ও হেলাল উদ্দিন। এদের মধ্যে দেবু হলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী আর হেলাল হলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমর্থক।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভূমিকা রাখছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তার কাছে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুই নেতার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রাজনীতি সংবাদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারণের বিষয়টি আমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সম্মেলনের আগে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে থেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে যারা দীর্ঘদিন জড়িত তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।’
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্বশীল একটা সূত্র জানায়, মহিবুল হাসান নওফেলের পক্ষ থেকে নানা সমীকরণে অন্যদের চেয়ে দেবাশীষ নাথ দেবু জোরালো আলোচনায় আছেন। এর মধ্যে অন্যতম দিক হলো, তিনি ১৯ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়া তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে দলের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা হিসেবেও তিনি পরিচিত।
দেবাশীষ নাথ দেবু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি সভাপতি পদে প্রত্যাশী। এই পদের জন্য আমি শতভাগ আশাবাদী। কেননা আমি ২০০২ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। মহিউদ্দিন (নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী) ভাইয়ের সাথে চট্টগ্রামের রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। তাই আমি মনে করছি, কেন্দ্র আমার এই ত্যাগের মূল্যায়ন করবে।’
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সূত্রটি জানায়, আবুল হাসনাত মো. বেলাল স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তিনি কাউন্সিলর হওয়ায় নেতৃত্বের দৌড়ে পিছিয়ে আছেন। কারণ দল এখন ত্যাগী নেতাদের সবাইকে মূল্যায়ন করতে চায়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকায় আর গত সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পাওয়ায় নওফেলের অনুসারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সালাহউদ্দিনও দৌড়ে পিছিয়ে আছেন। নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত আজিজুর রহমান আজিজ গ্রুপিং রাজনীতিতে বিতর্কের কারণে নেতৃত্বের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের অপর একটি সূত্র জানায়, নওফেলের পক্ষে একাধিক প্রত্যাশী থাকলেও নাছিরের পক্ষে একক প্রার্থী হলেন হেলাল উদ্দিন। আ জ ম নাছির তাকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নীতিনির্ধারকের কাছে তার জন্য সুপারিশ করেছেন। তবে নওফেলের অনুসারী নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর ছোট ভাই হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। আ জ ম নাছির সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ ও চট্টগ্রাম ল’ কলেজে ছাত্রদলের সাথে পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছিল। তখনও তো আমি মহিউদ্দিন বাচ্চুর ভাই ছিলাম। আমি নাছির ভাইয়ের ছায়াতলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে রাজনীতি করে আসছি।’
আরও পড়ুন:
https://rajnitisangbad.com/2020/11/12/%e0%a6%a8%e0%a6%97%e0%a6%b0-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%b2%e0%a7%80%e0%a6%97-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a6/