বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৪ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ

‘আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই, অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন’


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২ মার্চ, ২০২১ ৯:৩০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। আজ (২ মার্চ) মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন তারা। সমাবেশ থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, ভোট কারচুপি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজশাহীতে বিভাগে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। ঘোষণা ছাড়াই দু’দিন বাস বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার (২ মার্চ) সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বেলা ৩টায় নগরীর নাইস কনভেনশেন সেন্টারে শুরু হয় সমাবেশ। যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ ছয় সিটির বিএনপির পরাজিত মেয়রপ্রার্থীরা। সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, রাজশাহীতে সমাবেশের আগে বাস বন্ধ করে দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে, তারা বিএনপিকে ভয় পায়। সব রুটের বাস, ছোট ছোট যানবাহন বন্ধ করে, পথে পথে বাধা দিয়েও সরকার বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে মানুষকে থামাতে পারেনি। আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। এখন আন্দোলন বেগবান করে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এরই মধ্যে রাজপথ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এই আন্দোলনে সবাইকে শামিল হতে হবে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে প্রস্তুত আছি। জীবনের শেষবিন্দু রক্ত দিয়ে হলেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমি আছি। সবাই প্রস্তুতি নিন।’

তিনি বলেন, ‘দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। ফরিদপুরের ছাত্রলীগ সভাপতিই দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তাহলে রাঘববোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে তার হিসাব দেশের জনগণ নেবে।’

টুকু বলেন, ‘পুলিশ এখন সরকারি দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে রাজপথে। এবারও রাজপথেই ফয়সালা হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন দেখতে পাব। এর জন্য ঢাকার রাজপথে রক্ত দিতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামে আন্দোলন করে কিছু হবে না। ঢাকাকে সুসংগঠিত করতে হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘সরকার আন্দোলনের ভয়ে আগে থেকেই বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলনকে বিফল করার চেষ্টা করেছে। যার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবেই একদিন আগেই যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজও পরিবহণ বন্ধ। এজন্য অনেক নেতাকর্মী দূরদূরান্ত থেকে সমাবেশে আসতে পারেননি। বিনা বাধায় সমাবেশ করতে দিলে রাজশাহীর এই বিভাগীয় সমাবেশে গণজোয়ারের সৃষ্টি হতো।’

বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোন ভোট বাংলাদেশে হবে না। তার অধীনে কোন ভোট চাই না। সমস্ত বাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। ২১ সাল শেখ হাসিনার শেষ সাল। আমরা শেখ হাসিনাকে দেখতে চাই না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরাজিত মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘কালো আইনে সাংবাদিক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল নির্লজ্জ তামাশা। পুলিশ একটি দলীয় সরকারের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এটি স্বাধীনতার ৫০ বছরে কাম্য না। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো, প্রয়োজনে পাল্টা আঘাত করবো। এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির পরাজিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘রাজশাহীতে প্রবেশে বাধা দিয়েছে আমাকে। এটা হাস্যকর। আজ নির্বাচন কমিশন জাতীয় ভোটার দিবস পালন করছে যা তামাশা। কারণ তারা নির্বাচনের নামে মাফিয়াদের ক্ষমতায় বসায়। বিএনপি কালো আইন ডিজিটাল আইন বাতিল দাবি করে না, এটা বাতিল করিয়ে ছাড়বে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপির পরাজিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর বাজেট ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আর ভারতে এরকম একটি ব্রিজ হয় ১২০০ কোটি টাকায়। মাতারবাড়ি প্রকল্পেও একই অবস্থা বাজেট বেড়েই চলে। এই থেকে বোঝা যায় দুর্নীতির এই টাকা পাঠানো হয় কানাডার বেগম পাড়ায়। ভোটের আগে গায়েবি মামলায় এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হয়। আর যারা করেন তারা বলেন এটা ওপরের চাপে করা হয়। যখন নিম্নচাপ শুরু হবে তখন বুঝবেন কি অবস্থা।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর