শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৯ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ

মহিউদ্দিন বাচ্চুর চালে ধরাশায়ী খোকা-ফরিদ-দিদার-সুমন!


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২ জানুয়ারি, ২০২১ ১:৩৫ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের দুই পক্ষের পাঁচ নেতাকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকায় ডেকে নিয়েও কোন্দলের আগুন নিভাতে পারেনি। বরং কেন্দ্রে গিয়ে দুই পক্ষের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকারে রূপ নিয়েছে। কেন্দ্রে গিয়ে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর চালে ধরাশায়ী হয়েছেন প্রতিপক্ষ শিবিরের চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন।

দলীয় সূত্রের খবর, গত ২৪ নভেম্বর নগর যুবলীগের দুই পক্ষের এই পাঁচ নেতাকে ঢাকায় তলব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। পরশ তার বাসায় তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলসহ চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ফজলে শামস পরশ পাঁচ নেতাকে নগর যুবলীগের পৃথক কর্মসূচি পালনের কারণ জানতে চান। তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান তাদের অভিযোগ শুনে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে নির্দেশ দেন। পাঁচ নেতা তাতে সম্মতি দেন।

কিন্তু রাজনীতির হিসাব অত্যন্ত জটিল, দাবা খেলার মতই!

নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বৈঠক শেষে দাবার গুটির চাল দেন!

দলীয় সূত্রের খবর, চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন বৈঠক শেষে বেরিয়ে গেলে মহিউদ্দিন বাচ্চু যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলকে ২ জানুয়ারি নগর যুবলীগের সম্মিলিত উদ্যােগে সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভার আমন্ত্রণ জানান। তারা এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সায় দেন।

ঐক্যের বৈঠক থেকে বেরিয়ে নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহ্বায়ক এ কর্মসূচির খবর শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন ।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে নগর যুবলীগের উদ্যাগে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচির আয়োজন করেন নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মাইনুল হাসান খান নিখিল বৈঠক শেষে বাইরে বের হলে নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহ্বায়ক তার কাছে নালিশ দেন, গত ১৮ ডিসেম্বর মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভা তো আমরা করে ফেলেছি। মহিউদ্দিন বাচ্চু আমাদের সাথে কোনা আলাপ-আলোচনা না করে এ কর্মসূচির আয়োজন করছেন। যে অভিযোগের কারণে আমরা পৃথক কর্মসূিচ পালন করেছি তিনি (বাচ্চু) আবার সেই কাণ্ড করে বসলো। তাহলে এই বৈঠক করে কী লাভ হলো ?

দলীয় সূত্রের খবর, মহিউদ্দিন বাচ্চুর এমন কাণ্ডে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল অসন্তুষ্ট হয়েছেন। পরশ নগর যুবলীগের এই সভায় আসছেন না। তবে আসছেন নিখিল।

নগরীর কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আজ (২ জানুয়ারি) মহিউদ্দিন চৌধুরীর এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, দলের সবার সাথে আলোচনা করে আমি এই সভার উদ্যােগ নিয়েছি। এখন ওরা (চার যুগ্ম আহ্বায়ক) যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককে কী বলেছেন তা আমি জানি না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চাপা ক্ষোভ নিয়ে এই সভায় অংশ নেবেন নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহ্বায়ক।

জানতে চাইলে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, তিনি (মহিউদ্দিন বাচ্চু) যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। তিনি আমাদের সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা না করে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে এই সভার উদ্যােগ নিয়েছেন। এটা তার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। আমরা দলের সাধারণ সম্পাদকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সভায় অংশ নিবো।

নগর যুবলীগের অপর যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, তিনি (মহিউদ্দিন বাচ্চু) যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককেও বেকুব বানিয়েছেন। তারাও তার ধূর্তামি ধরতে পারেননি। তিনি সংগঠনকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছেন। এভাবে নেতা হওয়া যায় না।

গত ৮ মাস ধরে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাথে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে চার যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমনের বিরোধ চলে আসছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক মন্ত্রী ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম এ মান্নানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচিকে ঘিরে তাদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। গত দুই মাস ধরে দূরত্ব বজায় রেখে ১০টি কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করেছেন নগর যুবলীগের দুই পক্ষের নেতারা।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর