নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি-নির্যাতন ও জেলে আটকে রাখা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ নাকচ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি দাবি করেন, বিরোধী দলের যাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে তারা সবাই সন্ত্রাসী। ছবি, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পশ্চিমারা যাদের বিরোধী দল বলছে, সরকার তাদের সন্ত্রাসী বলছে? এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সত্যি নয়। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, তাদের সন্ত্রাসী বলেছি। কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আটক করার ইচ্ছা আমাদের নেই।
আবদুল মোমেন বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে একজনকেও হয়রানি করা হচ্ছে না। যারা সন্ত্রাসী, মানুষের বাড়িঘর জ্বালায়, সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ বিশেষ করে বাস, ট্রেন, ট্রাক জ্বালাতে গিয়ে ধরা পড়ছে বিশেষ করে মানুষকে পোড়াচ্ছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।’
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত রয়েছেন তাদের উচিত তা এখনই পরিহার করা। আমি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই।’
উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়ে আজ যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ৬টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ নিয়ে ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ
এ বিবৃতির বিষয়ে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের দিক থেকে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ একটি আদর্শ দেশ। উন্নত দেশে শপিং মলে, ক্লাবে, স্কুলে যখন তখন মানুষ মারা হয়। বাংলাদেশে কোথাও মসজিদে, শপিং মলে বা ক্লাবে প্রকাশ্যে আক্রমণ করে মানুষ মেরে ফেলার ঘটনা নেই। বাংলাদেশে বিনা বিচারে কাউকে মেরে ফেলা হয় না।’
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ টানেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে অন্যদের মানবাধিকারের শিক্ষা নেয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৫ বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যর্থতা চোখে পড়ে কিনা? জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের অনেক সাফল্য রয়েছে, যা আমি বলতে পারি। কোনো ব্যর্থতা রয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে না পারা কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ব্যর্থতা নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এটা ঠিক ব্যর্থতা নয়। এখানে একটি কথা বলে রাখি, শুধু বাংলাদেশ বা মিয়ানমার চাইলেই রোহিঙ্গারা ফেরত যাবে না, অন্যান্য বহু প্রতিষ্ঠান, বিদেশি বন্ধু, যারা বন্ধু হিসেবে আমাদের পরামর্শ দেয়, তাদের অনেকই চায় না এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা ফেরত যাক। তারা এ-ও বলে, বাংলাদেশে ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যা রয়েছে, সেখানে বাড়তি এক মিলিয়ন থাকলে সমস্যা কি? তাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গাদের দক্ষতা উন্নয়ন করে মূলস্রোতে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর দাবি করে আবদুল মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু বলে উপদেশ দেয়। উপদেশ ভালো হলে আমরা গ্রহণ করি। বাস্তবসম্মত না হলে আমরা উপদেশ গ্রহণ করি না, আর এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র রাগ করে না।’
নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি অনেক দিন আগের। বাংলাদেশ বোয়িং কিনতে চাচ্ছে, কারণ আমাদের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তার বিমানের বহরে কিছু বৈচিত্র্য আনতে চায়, তাই ১০টি এয়ারবাস কিনবো। ১০টি এয়ারবাস কেনার খবর বের হলে বোয়িং প্রস্তাব দিয়েছে আরও সস্তায় উড়োজাহাজ বিক্রির।’