শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

তরমুজচাষিদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৫ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:৫০ : পূর্বাহ্ণ
ছাত্রলীগ নেতা সবুজের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

তরমুজচাষিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে পিটুনি খেলেন ছাত্রলীগ নেতা। তিনি এখন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা আমতলী উপজেলার হলদিয়া হাটে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে।

ওই ছাত্রলীগ নেতার বিচার দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার ছাত্রলীগ সহসভাপতি মো. সবুজ মালাকার একজন কিশোর গ্যাং লিডার এবং ডজনখানেক মামলার আসামি। হলদিয়া ইউনিয়নের তরমুজচাষিদের কাছে তরমুজ প্রতি ১০ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছেন তিনি। কৃষকেরা চাঁদা না দিলে তরমুজের গাড়ি আটকে দেন।

কিন্তু কৃষক বাসুদেব শীল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সবুজ মালাকার গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে বাসুদেব শীলকে হলদিয়া হাটে তাঁর অফিসে ধরে নিয়ে যান। সেখানে ওই কৃষককে মারধর করা হয়।

এর প্রতিবাদ করলে বরগুনা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরিফ-উল-হাসান আরিফকেও মারধর করেন তিনি। তাকে রক্ষায় স্থানীয় রাকিবুল হাসান ও আরিফ হোসেন এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কৃষকেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা রাতেই হলদিয়া হাটে জড়ো হন। একপর্যায়ে সবুজ মালাকারকে পিটুনি দেওয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে।

তবে তার আগেই স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মিনহাজুর রহমান তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠাতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে সবুজ মালাকার বলেন, আমি আমার কয়েকজন দলীয় লোকজন নিয়ে হলদিয়া বাজারের আওয়ামী লীগ অফিসে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। সে সময় অ্যাডভোকেট আরিফের লোকজন পূর্ব শক্রতার জের ধরে আমার ওপর হামলা করে।

ঘটনার বিষয়ে আমতলী থানার এসআই মো. দাদন মিয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তবে যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।’

ভুক্তভোগী তরমুজচাষি কৃষক বাসুদেব শীল বলেন, ‘আমি ৩০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমার খেতের তরমুজপ্রতি তাঁকে ১০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আমি এতে রাজি না হওয়ায় সোমবার রাতে আমাকে তাঁর অফিসে ধরে এনে মারধর করেছেন। আমাকে মারধর করার প্রতিবাদ করায় সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আফির-উল-হাসান আরিফকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছেন। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’

জালাল হাওলাদার, জসিম মোল্লা, মজনু প্যাদা, বসির গাজীসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি সবুজ মালাকার প্রভাব খাটিয়ে এলাকার তরমুজচাষিদের কাছে তরমুজপ্রতি ১০ টাকা দাবি করেছেন। কৃষকেরা নিরুপায় হয়ে তাঁকে চাঁদা দিচ্ছেন। যাঁরা চাঁদা দেননি, তাঁদের তরমুজবোঝাই গাড়ি আটকে দিয়ে টাকা আদায় করছেন। আমরা ওই চাঁদাবাজ সবুজ মালাকারের নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই।’

ছাত্রলীগ নেতা সবুজ মালাকারের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত বছরের ১৬ আগস্ট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। ওই মামলায় তিনি পরে জামিনে মুক্ত হন। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

সবুজ মালাকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. রেজাউল কবির রেজা বলেন, ‘মারধরের খবর শুনেছি। যে কারণে তাকে মারধর করা হয়েছে, ওই ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে আমতলী থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর