শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫

মূলপাতা খেলা

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের বাংলাওয়াশ


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৪ মার্চ, ২০২৩ ৬:৩৩ : অপরাহ্ণ
ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

রূপকথার জন্ম হয়েছিল একদিন আগেই। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়েছিল বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে বাংলার আকাশে ডানা মেলেছিল ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন।

তাসকিন-মিরাজরা মিলে পূরণ করলেন সেই স্বপ্ন। হোম অফ ক্রিকেটে ইংলিশদের বাংলাওয়াশের লজ্জায় ডুবালো সাকিব আল হাসানের দল।

তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ৩-০ ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল লাল-সবুজের দল।

এই প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় ও হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।

আজ মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৫৮ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ইংল্যান্ড করেছে ১৪২ রান।

এর আগে টসে জিতে ইংলিশ অধিনায়ক বাটলার শেরেবাংলার স্পিন উইকেটে ফিল্ডিং বেছে নেন। তবে অধিনায়কের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে দারুণ সূচনা করে বাংলাদেশ।

ওপেনিং জুটিতে লিটন দাস ও রনি তালুকদার মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৫৫ রান। ব্যাট হাতে গেল কয়েক ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া লিটন আজ রানের দেখা পান। যদিও শুরু থেকে ছটফট করছিলেন রনি। ব্যক্তিগত ১৭ রানে একবার জীবন পান তিনি।

জফরা আর্চারের বল মোকাবিলায় শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দেন রনি। সেখানে থাকা রেহান জায়গায় দাঁড়িয়েই ক্যাচ নেন, তবে পরক্ষণেই তালগোল পাকিয়ে বল ফেলে দেন।

জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে করতে পারেননি রনি। ২৪ রানেই আদিল রশিদের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন তিনি। ইংলিশ তারকার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রনি।

অবশ্য রনিকে হারিয়েও বিপদ বাড়েনি বাংলাদেশের। কারণ দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশ পায় আরেকটি চমৎকার জুটি। লিটন দাস ও নাজমুল হাসান শান্ত মিলে ইংলিশ বোলারদের পরীক্ষা নেন। এর মধ্যে ৪১ বলে ক্যারিয়ারের নবম হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন লিটন।

হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর আরও আগ্রাসী ব্যাট করেন লিটন। সঙ্গে শান্তও ছিলেন আগ্রাসী। দুই ব্যাটারে চড়েই ইনিংস গড়ার ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

যদিও শেষ দিকে লিটন ফেরার পর রানের গতি কমে যায়। নয়ত আরও বড় সংগ্রহ গড়তে পারতো লাল-সবুজের দল। শেষ পাঁচ ওভার বাংলাদেশ রান নিতে ভুগেছে। তাতে ১৫৮ রানে গিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।

ব্যাট হাতে শেষ পর্যন্ত ৫৭ বলে ১টি ছক্কা ও ১০ চারে লিটন দাস উপহার দেন ৭৩ রানের ইনিংস। এটিই টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আগের সেরা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৯ রান। ১৭তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৩৯ রানে ভাঙে তাঁর প্রতিরোধ।

ক্রিস জর্ডানের করা স্লোয়ার বল মোকাবিলায় ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন ডানহাতি এই ওপেনার। লিটন ফিরলে শেষ পর্যন্ত শান্ত খেলেন ৩৬ বলে ৪৭ রানের ইনিংস। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল একটি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা দিয়ে। সাকিব ৬ বলে করেন ৪ রান।

ইংল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন ক্রিস জর্ডান ও আদিল রশিদ। জর্ডান ৩ ওভাররই স্লগে করেছেন। ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। আদিল ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। স্যাম কারেন ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান।

বাংলাদেশের দেয়া চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫ রানেই ইংলিশরা হারায় প্রথম উইকেট। অভিষিক্ত তানভীরের বলে উইকেট কিপার লিটনের দৃঢ়তায় বিদায় নেন ফিল সল্ট। রানের খাতাও খুলতে পারেননি ইংলিশ ওপেনার।

তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন বাটলার ও ডেভিড মালান। এই জুটিতে দুজন মিলে তোলেন ৯৫ রান। তাতেই বাংলাদেশের সমীকরণ কঠিন হয়ে পড়ে।

১৪তম ওভারে মুস্তাফিজ ভাঙেন এই জুটি। ফিরিয়ে দেন ৫৩ রান করা মালানকে। যেটা মুস্তাফিজদের ক্যারিয়ারের ১০০তম উইকেট।

একই ওভারে মিরাজের দুর্দান্ত রান আউটে বাটলারও বিদায় নেন ৪০ রানে। তখন ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।

জমে ওঠে দুদলের লড়াই। এর মধ্যেই নিজের স্পেলের শেষ ওভারে চমক দেখান তাসকিন।

এরপর ১৭তম ওভারে মঈন আলী ও বেন ডাকেটকে তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। ২৩ রানের মধ্যে চার উইকেট নিয়ে কামব্যাক করে টাইগাররা।

শেষে ক্রিস ওকস ১৩ রান করলেও তা ইংল্যান্ডের লজ্জা এড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।

শেষ পর্যন্ত ১৬ রানের জয় তুলে নেয় সাকিব আল হাসানের দল।

বল হাতে ২৬ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। ১৭ রানে একটি নেন তানভীর। মুস্তাফিজুর রহমানের শিকারও একটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৮ (রনি ২৪, লিটন ৭৩ , শান্ত ৪৭, সাকিব ৪ ; রেহান ৩-০-২৬-০, আর্চার ৪-০-৩৩-০, রশিদ ৪-০-২৩-১, জর্ডান ৩-০-২১-১, কারান ৪-০-২৮-০, ওকস ১-০-১২-০, মঈন ১-০-১২-১)।

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৪২/৬ (মালান ৫৩, বাটলার ৪০, সল্ট ০, মঈন ৯, ডাকেট ১১ , কারান ৪, ওকস ১৩, জর্ডান ২; তানভীর ২-০-১৭-১, তাসকিন ৪-০-২৬-২, হাসান ৪-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৪-০-১৪-১, সাকিব ৪-০-৩০-১, মিরাজ ২-০-১৮-০)।

ফল: ১৬ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ: ৩-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর