আওয়ামী লীগের চুরির কথা বলতে গেলে দিনরাত পার হয়ে যাবে: ফখরুল

আওয়ামী লীগের চুরির কথা বলতে গেলে দিনরাত পার হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

একটি গবেষণা সংস্থার তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের ট্রেজারি খালি করে দিয়েছে, ফোকলা করে দিয়েছে। গত ১০ বছরে দেশ থেকে ৮৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তারা আমাদেরকে ভাতে মারছে, পানিতে মারছে, কর্মসংস্থানে মারছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন-আগামী তিন মাস আমদানির টাকা নেই। সব গিলে ফেলেছে।’

আজ শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গুম, খুন ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা। গণসমাবেশ রূপ নেয় জনসমুদ্রে। পুরো শহর ছেয়ে যায় ব্যানার-ফেস্টুনে।

সমাবেশস্থল ও আশপাশের অন্তত ১ কিলোমিটার এলাকায় শুরুতে মোবাইল ইন্টারনেটে ধীরগতি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে ইন্টারনেট অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।

মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই মির্জা ফখরুল উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মেঘনা নাকি কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে।’

তখন উপস্থিত সবাই কুমিল্লা কুমিল্লা বলে স্লোগান দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের কুমিল্লার লাকসামের এমপি হিরু গুম হয়েছে। গত ৯ বছর তার কোনো খবর নেই। তার ছোট্ট শিশু বাবার জন্য কাঁদে। সিলেটের ইলিয়াস আলীর মেয়েও বাবার পথ চেয়ে বসে থাকে। এই সরকার তাদের চোখের জলের ভাষা বুঝতে পারছে না, প্রতিটি মানুষের চোখে আগুন তারা দেখেও না দেখার ভান করে অবিরত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। বাঞ্ছারামপুরের নয়ন বিনা কারণে লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে গুলি খেয়েছে। নয়নের বাবা যে বক্তব্য দিয়েছিল, তার চোখে আগুন ছিল। এই আগুন দেশের প্রতিটি মানুষের। দেশের মানুষ এই সরকারকে প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ।’

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১০ টাকা কেজি চাল দেবে বলেছিল, এখন কত? পেট্রল, ডিজেল, অকটেন, পেঁয়াজ-মরিচের দাম বাড়িয়েছে। ওদের আয় বাড়ে, ওরা ফুলে ফুলে এই মোটা হচ্ছে। দেশের শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা ৮ হাজার মাইল দূরে থেকে ডাক দিয়েছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশে ভাতের, শিক্ষার, স্বাস্থ্যের সমস্যা হবে না। আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি, যদি সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে আমরা সকল দল নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করবো।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার আবারও ২০১৪-১৮ সালের নির্বাচনের মতো নির্বাচন দেয়ার পাঁয়তারা করছে। তারপর পাতানো নির্বাচনে জিতে আবারও যেমন খুশি তেমন চুরি করবে।’

আরও পড়ুন: ভোট চুরি করলে দেশের মানুষ মেনে নেয় না: প্রধানমন্ত্রী

সরকারকে হুঁশিয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এখন বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় দেখতে চায়। সময় থাকতে ভালোয় ভালোয় বিদায় হন। না হলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।’

ঢাকার সমাবেশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার প্রথমে বলেছিল ঢাকায় কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। এরপর বলল পূর্বাচলে করো, এরপর বলল সোহরাওয়ার্দীতে করো। সরকার বাধ্য হচ্ছে, পরে বলবে ঠিক আছে পল্টনেই সমাবেশ করো।’

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা কুমিল্লাকে নিয়ে গর্ব করি। বর্তমান সরকার প্রধান কুমিল্লার মানুষকে দেখতে পারেন না, কুমিল্লার মানুষকে নানা অপবাদ দেন। এ অঞ্চলের মানুষ কুমিল্লা নামে কুমিল্লা বিভাগ চায়। সরকার প্রধান হীনমন্যতায় পরিচয় দিয়ে যদি অন্য যে নামেই বিভাগ দেন, আমরা সকলে তা প্রত্যাহার করবো। এ সরকারের সময় শেষ। আগামীদিনে আমরা ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লা নামে বিভাগ করবো, এ আশ্বাস দিয়ে গেলাম।’

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা প্রমুখ।