সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা আওয়ামী লীগ

যুবলীগের ৫০ বছর, শেখ মনি থেকে শেখ পরশ


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১১ নভেম্বর, ২০২২ ১০:২১ : পূর্বাহ্ণ
৫০ বছরে পেরিয়ে ৫১ বছরে পা রাখছে যুবলীগ।
Rajnitisangbad Facebook Page

৫০ বছরে পেরিয়ে ৫১ বছরে পা রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। ১৯৭২ সালের এই দিনে দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।

আজ শুক্রবার ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। প্রায় দশ লাখ লোকের মহাসমাবেশটিকে স্মরণকালের সেরা সমাবেশে রুপ দেওয়ার কথা বলেছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এই যুব মহাসমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।।

প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পার করে বর্তমানে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ মনির বড় সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ। সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এই রক্তপ্রজন্মের হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ।

যুবলীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা। অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে সামনের পথ চলাই সংগঠনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে বর্তমানে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ।

গত চার দশকের বেশি সময় ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারও নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ দেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠা পটভূমিতে জানা যায়, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একদিন শেখ মণিকে বলেন, ছাত্রজীবন পেরিয়েছে, অথচ যৌবন পেরোয়নি— এরকম বহু যুবক এখন আদর্শ ও লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে।

এখন অলস ও অকর্মণ্য জীবনে লক্ষ্যহীন হয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িত হচ্ছে। এদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগাতে পারলে একটি যুবশক্তি তৈরি হবে। যে শক্তির ভেতর থেকে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। দেশ ও সমাজের ভবিষ্যতের রূপকার হবে এই যুবসমাজ।

পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি এই যুব সমাজকে সংগঠিত করতেই গড়ে তোলেন যুবলীগ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সংগঠনটি একটি শক্তিশালী যুব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। প্রথম চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ মনি নিজেই। স্বাধীনতার পর যুবলীগ জিয়া-এরশাদ-খালেদার স্বৈরাচারী শাসনামলেও অকুতোভয়ে সংগ্রাম করেছেন।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত সাতটি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর।

ওই সময় যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪০ বছরের একটি বয়সসীমার বিধান ছিল। ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ওই বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়। ওই বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে ৩৮ বছর বয়সী আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩৭ বছর। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে ৪৭ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে ৪৯ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ কমিটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস। এ কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী।

আর ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ পরশ। এখন পর্যন্ত তিনিই সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় হাওয়ায় যুবলীগের কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনোসহ নানামুখী বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে।

পরে ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে উঠতে সংগঠনের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের হাতে নেতৃত্ব আসে।

যুবলীগ একটি মাল্টিক্লাস সংগঠন। এখানে কেবল ছাত্রলীগের সাবেক প্রতিশ্রুতিশীল নেতারাই শুধু নয়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিশ্রুতিশীল যুবকদের সম্মিলন রয়েছে। যে কারণে ক্ষমতাসীন সংগঠনের সহযোগী সংগঠন হিসাবে যুবলীগের সাংগঠনিক পরিচয়ে কেউ কেউ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে; যার দায় বর্তায় সংগঠনের ওপর তথা নেতৃত্বের প্রতি।

তাই গত কংগ্রেসে সংগঠনের ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে উঠতে যুবলীগের মতো সৃষ্টিশীল নির্ভীক নেতৃত্ব উপহার দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সংগঠনের নেতারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে গা এড়িয়ে চলে চলার চেষ্টা করে। করোনা মহামারি সংকটে মানবিক সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করে, যা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর