মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

নতুন রেকর্ড, পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো প্রায় ৪ কোটি টাকা


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১ অক্টোবর, ২০২২ ৮:২৯ : অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স খুলে এবার রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার রেকর্ড পরিমাণ অর্থ মিলেছে।

এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দানবাক্সে মিললো ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। এছাড়াও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।

আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলার পর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টাকা গণনা শেষে এই হিসাব পাওয়া যায়।

বাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার সাড়ে ১৫ বস্তা টাকা হয়। এরপর শুরু হয় টাকা গণনার কাজ।

ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর সিন্দুকগুলো খোলা হয়। এবার দুই মাস ২৯ দিন পর সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছে।

এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্র ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।

তবে এবার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে মিলেছে অসংখ্য চিঠি। এসব চিঠিতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের রয়েছে নানারকম আকুতি।

এর মধ্যে চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার প্রবণতার হাত থেকে বাঁচতে এক অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর চিঠি পাওয়া গেছে।

ওই শিক্ষার্থীর চিঠিতে লেখা রয়েছে- ‘আমাকে বাঁচাও আত্মহত্যার হাত থেকে। আমি বাঁচতে চাই, আর নিতে পারছি না বেকারত্বের বোঝা। সবার খোঁচা দেওয়া কথা। একটা চাকরি হলে হয়তো বেঁচে যেতাম।’

এর আগে সর্বশেষ ২ জুলাই দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তখন দানসিন্দুক খোলার পর ১৬ বস্তা টাকা হয়েছিল।

নতুন রেকর্ড, পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো প্রায় ৪ কোটি টাকা

পাগলা মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, দানবাক্সে পাওয়া টাকা দিয়ে এখানে আন্তর্জাতিক মানের বহুতল কমপ্লেক্স তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

পাগলা মসজিদের মালামাল সংরক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। দানসিন্দুকে দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলামঘরে প্রতিদিন মানুষ নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরড়ি, ফল-ফলাদি, কোরআন শরীফ ইত্যাদি। নিলামঘরে প্রতিদিন এসব নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।

মানুষের ধারণা, এই মসজিদে খাস নিয়তে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এজন্য দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে মানতের টাকা, সোনা, রুপার গহনা দান করে থাকেন।

অন্য ধর্মের মানুষেরাও এখানে দান করেন। আর এই ধারাবাহিকতা চলছে আড়াই শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা জানান, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এ মসজিদে দান করেন। তাদের বিশ্বাস, এখানে দান করলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির পাশাপাশি মনের বাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠি-পত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, পাগলা মসজিদ সারা বাংলাদেশে একটি বিখ্যাত মসজিদ। ১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদটি ওয়াকফের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। তখন থেকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদের সিন্দুক খুলে টাকা গণনা শুরু হয়।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর