দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। গেলো শনিবার বিকেলে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক চলে গেছেন তিনি। এই আওয়ামী লীগ নেতার ঈদের পরেই বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের কথা ছিল।
আজ সোমবার হজী সেলিমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ওই সূত্রটি জানিয়েছে, গেলো শনিবার তিনটি গাড়ি নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে যান হাজি সেলিম। সেখানে কবর জিয়ারত করে বিমানবন্দরে যান। এ সময় তার সঙ্গে পরিবারের কেউ ছিলেন না। তার সফরসঙ্গী হিসেবে ঘনিষ্ঠ কেউ যাননি। তিনি (হাজি সেলিম) যাওয়ার আগে বা পরে ঘনিষ্ঠ কেউ ব্যাংকক গিয়ে থাকতে পারেন। চিকিৎসার কথা বলে তিনি ব্যাংকক গেছেন।
এ বিষয়ে হাজি সেলিমের বড় ছেলে সোলাইমান সেলিমের এখনও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি গতকাল রোববার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তার বাবা এখন দেশে নেই।
এ বিষয়ে জানতে হাজী সেলিমের ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন বেলালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ঈদুল ফিতরের পর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু আত্মসমর্পণ না করেই তিনি গোপনে দেশত্যাগ করলেন। বর্তমানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী সেলিম জামিনে আছেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেরিমকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়সীমার মধ্যেই দেশ ছেড়লেন তিনি।
দুর্নীতির মামলায় এক যুগ আগে বিচারিক আদালতের রায়ে হাজী সেলিমের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিম হাইকোর্টে আপিল করেন। এই আপিলের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ‘সাজাপাপ্ত আসামি হওয়ায় হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদে আর নেই বলে আমি মনে করি। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশে যেতে পারেন না। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার কারণেই বিদেশ যেতে পারেননি। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে হাজী সেলিমও বিদেশ যেতে পারেন না।’