শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা খেলা

তীরে এসে তরী ডুবালো বাংলাদেশ


নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৯ অক্টোবর, ২০২১ ৮:০৭ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

আয়না ভাঙলে ‍দু’খণ্ড হয় চেহারা। বিশ্বকাপের মূল পর্বে শুরুর দুই ম্যাচে হেরে বাংলাদেশের স্বপ্নও দু‘খণ্ড হয়ে যায়। ‘যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ’ তত্ত্বের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভাঙা স্বপ্ন আঁকড়ে ছিলো লাল-সবুজ বাহিনীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ রানে হেরে ভাঙলো সেমিফাইনালের ওই স্বপ্ন।

ভুল সিদ্ধান্তে শ্রীলংকার বিপক্ষে হার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্তের পর আজ শুক্রবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়।

শুরুতে দারুণ বোলিং করে ক্যারিবীয়দের আটকেও রাখে। কিন্তু শেষ দিকে নিকোলাস পুরান ঝড়ো ২২ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে দলকে ১৪২ রানের সংগ্রহ এনে দেন।

এই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান করে। বাংলাদেশের ইনিংসে সব্বোর্চ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। তিনি ৪৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন।

রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল হতাশার। ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে মাঠে নামেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তাতেও সাফল্য আসেনি ওপেনিংয়ে। থিতু হতে পারেননি সাকিব। পঞ্চম ওভারেই তাঁকে বিদায় করেন আন্দ্রে রাসেল। ক্যারিবীয় তারকার বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে যান সাকিব। কিন্তু টাইমিং ঠিক রাখতে পারেননি। বল উঠে যায় আকাশে। মিড অফে সহজ ক্যাচ ধরে সাকিবকে ৯ রানে সাজঘরের পথ দেখান জেসন হোল্ডার।

সাকিবের পর বিদায় নেন নাঈম। পরের ওভারেই জেসন হোল্ডারের অফ স্টাম্প বরাবর করা ডেলিভারি পয়েন্টের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করেন নাঈম। পারেননি পাঠাতে। বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে। ২৯ রানে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। নাঈম করেন ১৭ রান।

মাঝে লিটন দাসের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েন সৌম্য সরকার। কিন্তু পারলেন না বেশিক্ষণ টিকে থাকতে। দলীয় ৬০ রানে বিদায় নেন সৌম্য। স্টাম্প থেকে বেরিয়ে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় শর্ট থার্ড ম্যানে। সামনে এসে দারুণ ক্যাচ নেন ক্রিস গেইল। ১৩ বলে ১৭ করে ফেরেন সৌম্য।

তিন টপ অর্ডারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ওই মুহূর্তে ফের স্কুপ করে বিদায় নেন মুশফিক। আট রানে আউট হন তিনি। তবে মুশফিক বিদায় নিলেও কঠিন সময় পার করা লিটন টিকে ছিলেন আজ। সমালোচনাকে দূরে উইকেটে লম্বা সময় টিকে ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ করে আসতে পারলেন না। ৪৩ বলে ৪৪ রান করলেন তিনি।

মুশফিক ফিরলেও শেষ পর্যন্ত জয়ের আশা জেগেছিল বাংলাদেশের। শেষ বলে বাংলাদেশের লাগত ৪ রান। ওই সমীকরণ মেলাতে পারলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে। ২৪ বলে ৩১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ওভারে ক্যারিবীয় ওপেনার এভিন লুইসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের লেংথ ডেলিভারিটিকে উড়িয়ে মারেন লুইস। টাইমিং ঠিক হয়নি। ব্যাটের কানায় লেগে বল উপরে উঠে যায়। ক্যাচ নিয়ে লুইসকে (৬) ফেরার পথ দেখান মুশফিকুর রহিম।

লুইসের পর ক্রিস গেইলকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদী হাসান। নিজের কোটার দ্বিতীয় ওভার করতে এসে গেইলকে বোল্ড করেন তিনি। মেহেদীর করা রাউন্ড দা উইকেটে বল পা বাড়িয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন গেইল। বল তাঁর ব্যাট-বলের ফাঁক দিয়ে চলে যায় স্টাম্পে। দুই ওপেনারকে হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে ভালো করতে পারেনি ওয়েস্টি ইন্ডিজ।

তীরে এসে তরী ডুবালো বাংলাদেশ

নিজের তৃতীয় ওভার বল করতে গিয়ে আরেকটি উইকেট তুলে নেন মেহেদী। ফিরিয়ে দেন শিমরন হেটমায়ারকে। অবশ্য মেহেদীর সাধারণ বলই মোকাবিলা করতে গিয়ে গায়ের জোরে উড়িয়ে মারতে যান। লং অনে ক্যাচ হয়ে যায়। সেখানে থাকা সৌম্য ক্যাচ ধরে হেটমায়ারকে বিদায় করেন।

দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়েন রস্টন চেইজ ও কাইরন পোলার্ড। দুজনে মিলে গড়েন ৩০ রানের জুটি। রানের গতি বাড়াতে পারলেন না কেউই। পরে আহত হয়ে সেচ্ছ্বায় মাঠ ছাড়েন তিনি। ১৬ বলে তিনি করেন কেবল ৮ রান।

টিকতে পারেননি মারকুটে ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেলও। তাসকিনকে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলতে চেয়েছিলেন রস্টন চেইজ। কিন্তু পারেননি। বল তাসকিনের পায়ে লাগে। পা দিয়েই ধাক্কা দিয়ে রানআউটে রাসেলকে বিদায় করেন তাসকিন। রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি।

অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে বেশ ধুঁকছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই মুহূর্তে দলকে উদ্ধার করেন নিকোলাস পুরান। চেইজের সঙ্গে ভালো একটি জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাড়ায় রানের গতি। ওই জুটিতেই মূলত লড়াইয়ের রানের পুঁজি পায় কাইরন পোলার্ডের দল।

অবশ্য এত রানও করতে পারতো না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝে কয়েকবার ক্যাচ মিস করে চেইজ ও পুরানকে জীবন দেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। শেষ পর্যন্ত ৩৯ রান করেন চেইজ। আর ২২ বলে ৪০ রান করেন পুরান। শেষ দিকে ৫ বলে ১৫ রান করেন জেসন হোল্ডার।

বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ২৭ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট নেন মেহেদী। দুই উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলামও। সবচেয়ে বেশি ৪৩ রান দিয়ে মুস্তাফিজ পেয়েছেন দুটি উইকেট। উইকেট শূন্য ছিলেন সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর