রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৫ মাঘ, ১৪৩১ | ১৮ রজব, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকার পাহাড়! এবার মিললো ৮ কোটি ২১ লাখ


আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাগলা মসজিদের দানবাক্সের টাকা গণনা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৩৩ অপরাহ্ণ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া গেছে।

আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মিজাবে রহমত বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে সকাল সাতটার দিকে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ১১টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়। দানবাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার ২৯ বস্তা টাকা হয়। এরপর টাকাগুলো মেঝেতে ঢেলে গণনা করা হয়।

জেলা প্রশাসনের ১২ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১০ সেনা সদস্য, ১৭ পুলিশ সদস্য, ৯ আনসার সদস্য, ২৮২ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, ৩৬ শিক্ষক ও স্টাফ এবং রূপালী ব্যাংকের ৭৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা ধরে এসব টাকা গণনা করে। টাকা গণনা দেখতে শহরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে আসেন।

প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর এই সিন্দুক খোলা হয়। এবার ৩ মাস ১৪ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ আগস্ট খোলা হয়েছিল দানসিন্দুকগুলো। তখন তিন মাস ২৬ দিনে ২৮টি বস্তার মধ্যে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া যায়, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।

জানা গেছে, মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। অন্যদিকে সেখানে আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির এটির কাজ শুরু হবে। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এতে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।

 

জনশ্রুতি রয়েছে, এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বসবাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।

কিন্তু ওই সাধকের মৃত্যুর পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছে এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।

আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদের কে সেই ‘পাগলা সাহেব’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর