রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩:২৫ অপরাহ্ণ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনের নামে আওয়ামী লীগ আবার নতুন করে আসার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ও চট্টগ্রামে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো হিন্দু ভাইদের গায়ে ফুলের টোকাও পড়েনি। আওয়ামী লীগ লুট করা টাকা এখন খরচ করছে। সেসব ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। প্রশাসনের কাছে দাবি অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ইসকন কোনো হিন্দু সংগঠন নয়, তারা একটি জঙ্গি সংগঠন। ভারত এই দেশকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছে, সেটা সফল হতে দেওয়া যাবে না।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে নই, তবে ৯০ শতাংশ মুসলিমের এই দেশে এমন কিছু মেনে নেওয়া হবে না। ইসকনকে অনতিবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নইলে আগের মতো কেউ পালাবার পথও পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, ইসকনের বিরুদ্ধে বলা মানে হিন্দু ভাইদের বিরুদ্ধে বলা নয়। আমাদের হিন্দু ভাইদের আমরা নিরাপত্তা দেবো।
এ সময় মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা জালালুদ্দীন, মুফতি বশিরুল্লাহ, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা মহিউদ্দিন মাসুম, মাওলানা জুবায়ের আহমাদ, মুফতি আজহারুল ইসলাম, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মুফতী কামাল উদ্দীন, মাওলানা আফসার মাহমুদ, মাওলানা আব্দুল মালেক, মাওলানা শরিফ উল্লাহ, মুফতী আমিনুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা সানাউল্লাহ খান, মাওলানা শরিফ হোসাইন, মাওলানা বশিরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিম্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন তাকে চট্টগ্রাম আদালতে নেওয়া হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। জামিন না দেওয়ার জের ধরে সেখানে বিক্ষোভ করেন ইসকনের সমর্থকরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। সংঘর্ষ চলাকালে আদালত এলাকায় মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় তারা।
একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ইসকনের অনুসারীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু করলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন। এরপর তাকে তুলে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাইফুলকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলিফ সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জালাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।
আলিফ হত্যার ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের মুক্তি চেয়ে শেখ হাসিনার বিবৃতি