সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আওয়ামী লীগ

ছাত্রলীগকে ‘গুন্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনী’ বললেন সোহেল তাজ


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ৯:২৩ : অপরাহ্ণ
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ ছাত্রলীগকে ‘গুন্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ছাত্রলীগের নানা অপকর্ম নিয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের কয়েকটি খবরের ছবি পোস্ট করে সোহেল তাজ লেখেন, ‘নিয়তির কী নির্মম পরিহাস, যে ছাত্রসংগঠন ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলার মানুষের সকল লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল, সেই ছাত্রলীগ তারই অপকর্মের জন্য নিষিদ্ধ হলো।’

সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পোস্টে বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর তাদের একটা বিবৃতি পড়ে আমি খুবই বিচলিত হলাম। যেখানে তারা বলছে, তাদের অতীত ভূমিকার কথা। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফাসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদানের কথা বলছে নির্লজ্জের মতো। আমি ওনাদেরকে বলবো, আপনারা এই সব কথা বলা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। কারণ আপনারাই ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছর হত্যা/ধ্বংস করে একটি গুণ্ডা, সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। ছাত্রজনতা গণঅভুত্থানে জনগণের সাথে না থেকে এই সংগঠনকে ব্যবহার করা হয়েছে হিংস্রভাবে মানুষ হত্যা এবং নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে। এই দায় কোনভাবেই এড়ানো যাবে না।’

সোহেল তাজ লেখেন, ‘বর্তমান ছাত্রলীগ এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ আর স্বাধীনতা সংগ্রামের ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ কোনভাবেই এক না। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস টেনে এই জাতির গর্বের স্থানগুলোকে বিতর্কিত করার অধিকার আপনাদের নাই।’

পোস্টের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ‘ব্রেন ওয়াশড’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লেখেন, ‘ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ব্রেইন ওয়াশড, নষ্ট-পঁচা নীতি-আদর্শ বিচ্যুত লুটেরা, খুনি, হত্যা, গুম, নির্যাতনকারীদের সমর্থক সকলকে বলবো অনতিবিলম্বে আমার এই ফেসবুক পেইজটি আনফলো করতে। আর অনুরোধ থাকবে নিজের বিবেককে জাগিয়ে আত্মউপলব্ধি ও আত্মসমালোচনা করে অনুশোচনা করার জন্য।’

গত ২৩ অক্টোবর রাতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিল।

‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অ্যাসেম্বলি হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, অন্তঃকোন্দল, হামলা-মারামারি, খুন, শিক্ষার্থী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে ছাত্রলীগের সমালোচনা হয়েছে।

চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালে সমালোচনার মুখে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেন শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবরার। পরে ওই হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড আর ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় দরজি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান। একই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদকে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একই দাবিতে ২০২৪ সালে আবার আন্দোলন শুরু হলে গত ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ওই দিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ক্যাম্পাসে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ হয়েছে, তার জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত। তবে ১৬ জুলাই রাতে এবং পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বের করে দেন শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাঁদের বের করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার

মন্তব্য করুন


আরও খবর