ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিক ও যৌথবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দুই শ্রমিক।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিকের নাম কাউসার হোসেন খান (২৬)। তিনি ম্যাঙ্গোটেক্স লিমিমিটেডের অপারেটর ছিলেন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন-আশুলিয়ার ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবিব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান, শ্রমিক রাসেল ও নয়ন।
জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশের প্রেক্ষিতে, বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানা আর এন আর ফ্যাশনস লি., বার্ডস গার্মেন্টস লি., বার্ডস ফেডরেক্স লি. এবং বার্ডস এ এন্ড জেড লি. ২৮ আগস্ট থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে, বিজিএমই এর সাথে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বৈঠকে আজকের মধ্যে শ্রমিকদের যাবতীয় আইনগত পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও বার্ডস কর্তৃপক্ষ আজ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানায়। এতে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পরবর্তীতে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, আজ সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক চলছিল। সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হোন।
তারা আরও জানান, যৌথবাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে শ্রমিকরা র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। যৌথবাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা আরও মারমুখী হয়ে উঠেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায়।
ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক মো. সুমন বলেন, আজ সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিলেন। আমাদের কারখানায় কোনো আন্দোলন হয়নি। মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে সেখানে যান। আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও যোগ দেন। যৌথবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের লাঠিচার্জ ও গুলি করেন। দুই জনের পায়ে গুলি লাগে। আমি তাদের একজনকে পিএমকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
আশুলিয়ার পিএমকে হাসপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন বলেন, দুই শ্রমিক নাজমুল ও হাবিবকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়। আরও দুই আহত শ্রমিককে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শ্রমিক কাউসার, নয়ন ও রাসেলকে সাভারের এনাম মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসকরা কাউসারকে মৃত ঘোষণা করেন।
এনাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. এনামুল হক বলেন, কাউসারকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার তলপেটে গুলি লেগেছে। নয়নের বুকের বাম পাশে গুলি লেগেছে। রাসেলের বুকে গুলি লেগেছে। এগুলো ছররা গুলি নয়। আহত দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধদের এনাম মেডিকেলে নিয়ে আসা ম্যংগটেক্স কারখানার শ্রমিকরা ইকরামুল হক বলেন, মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা আন্দোলন করছিলেন। আমাদের কারখানাটি মন্ডল গ্রুপের বিপরীত পাশে। আমরা কারখানা থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম। সেসময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা গুলি করেন। কাউসারসহ তিন গুলিবিদ্ধ শ্রমিককে এনাম মেডিকেলে নিয়ে আসলে ডাক্তাররা কাউসারকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেই বিমানবন্দরে আটক সাবেক এমপি সুলতান মনসুর