বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৪২২ জনই বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই ৪২২ জনের নাম-গ্রামসহ সম্পূর্ণ তালিকা আমাদের কাছে আছে। এটি আমাদের ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হবে।’
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন। যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন মানুষ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সব শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষের বিশাল অংশ যে বিএনপির নেতাকর্মী এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ বিজয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য নির্যাতিত মানুষের বেদনার অপ্রকাশিত ইতিহাস, গুম হওয়া ছেলের ফেরার প্রতীক্ষায় ব্যাথাতুর মায়ের ডাক, স্বামী হারানো বেদনাবিধূর স্ত্রীর অনন্ত আর্তনাদ, পঙ্গু বাবার জন্য সন্তানের হৃদয়বিদারক হাহাকার, আর কারাগারে বন্দি ভাইয়ের জন্য বোনের নীরব প্রার্থনা। তাদের সবার ১৬ বছরের রক্ত, শ্রম ও অশ্রু দিয়ে, প্রতিটি পরিবারের ক্ষোভ, ক্রোধ ও অব্যক্ত বিস্ফোরণ বুকে ধারণ করে; চলমান ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বস্তুত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত শহীদ এক হাজার ৫৫১ জন, গুম ৪২৩ জন (সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন), আসামি ৬০ লাখ এবং মামলা দেড় লাখ। এসব কেবল বিএনপির ত্যাগের পরিসংখ্যানই নয়, বরং বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পথে দলটির অবিচল সংগ্রাম ও অবদানের প্রতিফলন।’
এ সময় আন্দোলনের কৃতিত্ব নয়, স্বৈরাচার পতন নিশ্চিত করাই বিএনপির লক্ষ্য ছিল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে পারেনি। পোশাক শিল্পে অস্থিরতার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা দায়ী।’
আন্দোলন ঘিরে ঠিক কতজন প্রাণ হারিয়েছেন সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষে এখনও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৭৫ জন নিহত এবং ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)’।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে গত জুলাইয়ের শুরুতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক পর্যায়ে কর্মসূচি ঘিরে ১৬ জুলাই আন্দোলনে হামলা হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র