রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৮ মে, ২০২৪ ৭:০১ : অপরাহ্ণ
অবশেষে ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করতে বাধ্য হলো দেশের শতবর্ষী ব্যবসায়ী সংগঠন-চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। কর্পোরেট খাতে প্রতিনিধিত্বকারী এই ব্যবসায়ী সংগঠনটি সরকারকে ট্যাক্স না দিতে নানা ‘অজুহাত’ দেখিয়েছিলো। কিন্তু চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের চাপে শেষ পর্যন্ত নমনীয় হয়ে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়েছে সংগঠনটিকে।
চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের সার্কেল-৯ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে। দুই বছরের ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ট্যাক্স প্রদান করেছে সংগঠনটি।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম চেম্বারের কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। গত বছরের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম চেম্বারে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা অগ্রাহ্য করে ট্যাক্স না দেওয়ার জন্য নানা অজুহাত দেখায়। এরপর আমরা তাদেরকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করি। শেষ পর্যন্ত তারা নমনীয় হয়ে দুই বছরের ট্যাক্স পরিশোধ করেছে। তারা এখন থেকে নিয়মিত কর পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন।’
বছরের পর বছর ধরে সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আসছিল চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন-চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স। এ নিয়ে গত বছরের ৯ অক্টোবর রাজনীতি সংবাদে ‘মাসে কোটি টাকা আয় করেও ট্যাক্স দেয় না চট্টগ্রাম চেম্বার’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন: মাসে কোটি টাকা আয় করেও ট্যাক্স দেয় না চট্টগ্রাম চেম্বার
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর টনক নড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। চট্টগ্রাম চেম্বারকে আয়কর রিটার্ন (সম্পদের বিবরণী) দাখিল করতে গত বছরের ১২ অক্টোবর নোটিশ পাঠায় এনবিআর। কিন্তু চট্টগ্রাম চেম্বার নোটিসের জবাব দেয়নি।
আরও পড়ুন: আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে চট্টগ্রাম চেম্বারকে এনবিআরের নোটিশ
নোটিসের জবাব না দেওয়ায় গত বছরের ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের সার্কেল-৯ এর একজন কর পরিদর্শক নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চেম্বারের কার্যালয়ে হানা দেয়। কর পরিদর্শকের উপস্থিতি দেখে ট্যাক্স পরিশোধ করতে রাজি হয় চেম্বার কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম চেম্বারে কর পরিদর্শকের হানা
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম চেম্বার বিভিন্ন খাত থেকে মাসে কোটি টাকা আয় করে।অথচ বছরের পর বছর ধরে সরকারকে ট্যাক্স দেয় না প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে চট্টগ্রাম চেম্বারের আয় হয়েছিল ১১ কোটি ৬ লাখ ৭ হাজার ১৯৮ টাকা। এর মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্পেস ও হলরুম ভাড়া, পুরনো চেম্বার হাউসের ভাড়া, বাণিজ্য মেলা, মেম্বারদের ফি ও চাঁদা এবং অন্যান্য খাত থেকে গত বছর চট্টগ্রাম চেম্বারের আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির এফডিআর আছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। গত বছর এফডিআর থেকে ইন্টারেস্ট বাবদ চেম্বারের আয় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা আয় হয় চট্টগ্রাম চেম্বারের।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২০২২ সালের চট্টগ্রাম চেম্বারের অডিট রিপোর্টে গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটির এফডিআরের ইন্টারেস্ট ও বিভিন্ন আয়ের ওপর ৩ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার ৯৮১ টাকার ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। যা প্রভিশন (সঞ্চিত তহবিল) হিসেবে আলাদা করে রাখা হয়।
প্রতি বছর অডিট রিপোর্টে ইনকাম ট্যাক্সকে প্রবিশন করে রাখলেও আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি চট্টগ্রাম চেম্বার। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, বার্ষিক হিসাব শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়।
২০১৩ সালের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি এসআরও (সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ, নম্বর-২১০) জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত বাণিজ্য সংগঠন মুনাফা এবং ব্যবসা হতে আয় করলে কর প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরে পর বছর সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার।
আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী, বাণিজ্য সংগঠনকে বার্ষিক আয় থেকে ২৭.৫ শতাংশ কর দেওয়ার বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য মেলার নামে চট্টগ্রাম চেম্বারের কোটি টাকার ‘বাণিজ্য’