ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নওগাঁ সীমান্তে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া লালমনিরহাট সীমান্তে এক বাংলাদেশি কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে ওই কিশোর ঘটনাস্থলে মারা গেছেন বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
আজ মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর হাপানিয়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় অংশে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন (৩২) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন।
আল আমিন উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নে চক বিষ্ণুপুর কলোনি মোড় এলাকার সিদ্দিকের ছেলে।
পরিবারের বরাত দিয়ে নিতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, সোমবার বিকেলের দিকে আল আমিন বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর ভোর রাতের দিকে স্থানীয় কিছু লোকজন জানান ভারতের অভ্যন্তরে আল আমিনকে গুলি করা হয়েছে। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নওগাঁয় বিজিবি ১৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু জানতে পারিনি। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকালও দুদেশের সম্প্রীতি রক্ষায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। পরদিনই এমন ঘটনা দুঃখজনক। বিএসএফের সঙ্গে কথা ছিল তারা এমন কাউকে পেলে আটক করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু তারা তা করছে না।’
এদিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী সীমান্তে ৯২৩ নাম্বার সীমান্ত পিলারের কাছে বিএসএফের গুলিতে লিটন মিয়া (১৮) নামে এক বাংলাদেশি কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
লিটন মিয়া দূর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের মোকছেদুল ইসলামের ছেলে।
মোকছেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানা কৈমারী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা আমার ছেলেকে গুলি করেছে। আমার ছেলেটা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। বিএসএফ সদস্যরা ওর মরদেহ ভারতে নিয়ে গেছে।’
লিটনের মা দুলালী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলের লাশ পড়ে আছে ভারতে।’
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দীঘলটারী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার সাঈদুর রহমান বলেন, ‘লিটন মিয়া ভারত থেকে গরু আনার সময় বিএসএফের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে।’
এর আগে গত ১৭ মার্চ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরকে বিএসএফ সদস্যরা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: এবার সীমান্তে ১৪ বছরের কিশোরকে গুলি করে হত্যা করলো বিএসএফ
গত ৫ থেকে ৯ মার্চ ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সম্মেলন শেষে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বিজিবি ও বিএসএফের এখন মূল লক্ষ্য যাতে সীমান্তে হত্যা না ঘটে।’
কিন্তু এই সম্মেলন শেষ হওয়ার দুই মধ্যে এ পর্যন্ত দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে মেরেছে বিএসএফ।
