রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৮ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন

এবার লতিফের বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন হাসিনা মহিউদ্দিন


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৬:০৭ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফের বিরুদ্ধে এবার মাঠে নেমেছেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিণী।

মহিলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ নামে একটি সংগঠনকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় লতিফের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুুঁসে উঠেছেন হাসিনা মহিউদ্দিন। এর জের ধরে লতিফের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনকে সমর্থন দিয়েছে মহিলা আওয়ামী লীগ।

এর আগে এম এ লতিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনকে সমর্থন দিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ। লতিফের অনিয়ম-দুর্নীতি, দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা-হয়রানিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নগর আওয়ামী লীগ এবার তার পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

গত ২৭ নভেম্বর নগরীর বন্দর এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের পক্ষে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

এরপর গত ২৮ নভেম্বর নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এম এ লতিফের বিরুদ্ধে অনাস্থা ঘোষণা করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ অনেক নেতা লতিফের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

আ জ ম নাছিরের পর এবার হাসিনা মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে লতিফের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ।

গতকাল মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) নগরীর বন্দর থানা এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম-১১ আসনে মহিলা আওয়ামী লীগের ৪টি থানা ও ১০টি ওয়ার্ডের উদ্যোগে একটি সভার আয়োজন করা হয়।

এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। সভায় তিনি তার বক্তব্যে ‘সুমন বিজয়ী হলে আওয়ামী লীগের ও শেখ হাসিনার বিজয় হবে’ বলে মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন: সুমনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন না লতিফ

এম এ লতিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মহিলা আওয়ামী লীগ তো বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া একটি সংগঠন। এই সংগঠনকে সবাই গুরুত্ব দেয়। কিন্তু লতিফ সাহেব মহিলা আওয়ামী লীগকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীনতা নারী শক্তি নামে আরেকটি নারী সংগঠন সৃষ্টি করেছেন। উনি (লতিফ) এটা কোন উদ্দেশ্যে করেছেন? উনি (লতিফ) এমন কী হয়েছেন?’

নগর মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিলু নাগ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মহিলা আওয়ামী লীগকে নাকি উনার (লতিফ) পছন্দ হয় না। তাই বিএনপি-জামায়াতপন্থি মহিলাদের নিয়ে স্বাধীনতা নারী শক্তি নামে আরেকটি নারী সংগঠন গঠন করেছেন। আমরা শুনেছি, স্বাধীনতা নারী শক্তি প্রথমে গঠন করেছিলেন যুদ্ধাপরাধী প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সেই যুদ্ধাপরাধীর হাতে গড়া সংগঠনটি আবার চালু করেছেন এমপি লতিফ।’

এ বিষয়ে জানতে এম এ লতিফের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা বলছেন, নির্বাচন উপলক্ষে এম এ লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বারে স্বাধীনতা নারী শক্তি নামে ভুঁইফোড় একটি সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। তিনি নৌকার প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করেছেন। নির্বাচনে তিনি এর ফল পাবেন।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের একি কাণ্ড!

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে এমপি লতিফের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই বছরের ১ মার্চ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত প্রতিবাদে সমাবেশে তিনি এম এ লতিফের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া লতিফকে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার ও তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও দাবি জানিয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। সমাবেশে প্রকাশ্যে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নগরীর বন্দর থানায় একটি জিডি করেছিলেন লতিফ।

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে ঘিরে এম এ লতিফের উদ্যোগে আগ্রাবাদ ও বিমানবন্দর সড়কে অসংখ্য ফেস্টুন লাগানো হয়। এসব ফেস্টুনে ব্যবহার করা ছবিতে লতিফের অবয়বের ওপর বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডল জুড়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে লতিফ সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেন বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা হয়েছে। এ জন্য গ্রাফিক ডিজাইনারকে অভিযুক্ত করেন এবং ছবি বিকৃতির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

এম এ লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি থাকাকালে ব্যবসায়ী মহলে তার পরিচিতি ছিল ‘আওয়ামীবিরোধী’ হিসেবে। সেই এম এ লতিফ ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে দলটির নেতাকর্মীরা বিস্মিত হন! নৌকায় উঠে তিনি এ পর্যন্ত তিনবার আওয়ামী লীগের এমপি হলেও দলটির নেতাকর্মীদের একটি অংশ তাকে এখনো দলীয় লোক মনে করেন না।

আরও পড়ুন:

নির্বাচনের আগে নতুন সমালোচনার মুখে এমপি লতিফ

ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন মহিউদ্দিন বাচ্চু, মনজুর আলমের পেছনে কে

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর