রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৮ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

নির্বাচনের আগে নতুন সমালোচনার মুখে এমপি লতিফ


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ৪:০৪ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর উপকণ্ঠে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চরকিশোরগঞ্জে জোর খাটিয়ে ১০টি পরিবারের জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, চরকিশোরগঞ্জ এলাকার ধলেশ্বরী নদীর তীরে গ্লোব শিপইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে জাহাজ মেরামতকারী একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এমপি লতিফ। এই শিপইয়ার্ডে যাতায়াতের জন্য অসহায় মানুষের ফসলি জমি দখল করে তিনি সড়ক নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে আড়াই একর জমি কিনে এই শিপইয়ার্ড গড়ে তোলেন এমপি লতিফ। কিন্তু বর্তমানে তার শিপইয়ার্ডে জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ থেকে ৯ একর।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে জমি দখলে নিতে এমপি লতিফ তার অনুসারীদের দিয়ে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একের পর এক মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে গ্লোব শিপইয়ার্ডের প্রজেক্ট ম্যানেজার যুবায়ের হোসেন বাদী হয়ে স্থানীয় ১০ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। একই সঙ্গে আদালতেও সংসদ সদস্যের পক্ষে আলম মাদবর নামে এক ব্যক্তি স্থানীয় ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজ সকালে সংসদ সদস্য এম এ লতিফের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বিমানে উঠছেন জানিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

নির্বাচনের আগে মুন্সীগঞ্জে এম এ লতিফের অসহায় মানুষের জমি দখলের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে এম এ লতিফের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা সমালোচনা করছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, এমপি লতিফ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অসহায় মানুষের জমি দখল করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। তিনি এর আগে বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

এম এ লতিফ ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি। ব্যবসায়ী মহলে তার পরিচিতি ছিল ‘আওয়ামীবিরোধী’ হিসেবে। সেই এম এ লতিফ ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে দলটির নেতাকর্মীরা বিস্মিত হন! নৌকায় উঠে তিনি আওয়ামী লীগের এমপি হলেও দলটির নেতাকর্মীদের একটি অংশ তাকে জামায়াতের লোক মনে করেন। ২০০৮ সালে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় তিনি জামায়াত-সমর্থিত একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। এ নিয়ে তখন নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপি লতিফের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর একের পর এক বিতর্কের জন্ম দেন লতিফ।

২০০৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। এরপর পতেঙ্গায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত এবং বিমানের ফ্লাইটে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন তিনি।

এরপর ২০১৬ সালে লতিফের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের কার্যালয়ের হলরুমে নারী কর্মীদের নিয়ে সভা করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন এমপি লতিফ। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এমপি লতিফের এমন কর্মকাণ্ডে বিস্মিত হন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এমপি লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বারের কোনো দায়িত্বে না থাকলেও এই ট্রেড বডিকে তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের একি কাণ্ড!

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে নানা কারণে দলে বিতর্কিত হয়ে পড়া এম এ লতিফকে। কারণ গত পাঁচ বছরে নিজের সংসদীয় এলাকায় তার তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না। গত পাঁচ বছরে তিনি এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও করতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে প্রায় দুই বছর তিনি ঘরবন্দি ছিলেন।

শুধু সংসদীয় এলাকায় নয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও গত পাঁচ বছরে এমপি লতিফ সক্রিয় ছিলেন না। দলীয় এমপি হয়েও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি তিনি। দলের বাইরে গিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছেন তিনি। নগর আওয়ামী লীগ নেতারাও এমপি লতিফের বিরুদ্ধে চরম ক্ষুব্ধ। এমপি লতিফ নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে এমপি লতিফের সামনে বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি তিনটি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-১১ আসনও রয়েছে।

দলীয় একটি সূত্র বলছে, গত পাঁচ বছরে এমপি লতিফ সংসদীয় এলাকায় ও দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় না থাকায় এবার মাইনাস হয়ে যেতে পারেন।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর