কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ঐক্য পরিষদের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় সংগঠনটির এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটে গেছে। এ ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের ‘সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ’, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ‘দুর্গাপূজাকে কটাক্ষ করে মন্তব্য’, কুড়িগ্রামের চারণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলা এবং বিভিন্ন জায়গায় পূজার প্রাক্কালে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে দেশব্যাপী এই প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিল হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লায় এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তাপস বকশী গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রথমে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের মিছিলে ধাওয়া করে। এতে এক নারীসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন দুর্গাপূজায় মদ খাওয়া নিয়ে কটূক্তি করায় আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কোনো নেতার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার সকাল ১০টায় নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার রাজস্থলী মন্দির এলাকায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের জেলা সভাপতি চন্দন রায়। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অংশগ্রহণকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর কান্দিরপাড় পুবালী চত্বরে আসছিল। এ সময়ে পুলিশ নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ সড়কের কর ভবনের সামনে তাদের বাধা দেয়। এ সময় নগরীর কান্দিরপাড় পুবালী চত্বর থেকে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েক’শ নেতাকর্মী মিছিলকারীদের ধাওয়া করে হামলা করে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কুমিল্লা কোতোয়ালী থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, আমরা কর্মসূচিতে বাধা দিইনি। মূলত সংঘাত এড়াতে পুলিশ মিছিলটিকে কান্দিরপাড়ের পুবালী চত্বরে যেতে দেয়নি। কারণ কান্দিরপাড়ে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। আকস্মিক তারা মিছিল নিয়ে এসে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করেন। পরে আমরা পরিস্থিতি সামাল দিই। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে ‘মদ মুক্ত’ পূজা উদযাপনের আহ্বান জানান কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার।
পূজা চলাকালে মদ খেয়ে মণ্ডপে নাচানাচি না করে মাদকমুক্ত পূজা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে এমপি বাহার বলেন, পূজা চলাকালে মদ খেয়ে নাচানাচি বন্ধ করতে হবে। আসুন কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’।
তার এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তার বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে।
গত ৮ অক্টোবর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মিহির রঞ্জন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের বক্তব্যকে ‘সাম্প্রদায়িক উক্তি’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।