মায়ের মৃত্যুতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন। হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় তাকে হাজির করা হয় মায়ের জানাজায়। এ অবস্থায়ই মায়ের জানাজা পড়ান তিনি।
ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরা অবস্থায় জানাজা পড়ানোর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে নিন্দার ঝড়।
সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে বিষয়টি ‘অমানবিক’, ‘এটাই বাংলাদেশ’, ‘পুরো দেশের হাতেই এখন হাতকড়া আর পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি’ ইত্যাদি লিখে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে ব্যবহারকারীদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তারা বলছেন, একটি গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামির সঙ্গে এমন আচরণ মানবতার চরম লঙ্ঘন। বিচারাধীন মামলায় এমন একজন আসামিকে কোনোভাবেই ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর সুযোগ নেই। এটি বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি আদেশ বহাল থাকা সত্ত্বেও তারা এটা করেছেন।
আরও পড়ুন: ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় নেয়া মানবাধিকার পরিপন্থী: আসক
আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান জানান, একটি রাজনৈতিক মামলায় তার ভাইকে ২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে। মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল ভাই যেন তার জানাজা পড়ান। এ কারণেই প্যারোলে মুক্তি চাওয়া হয়। মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ভাই জানাজা পড়ান। কিন্তু হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরা ছিলেন তিনি। অনুরোধ করেও হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি খোলানো যায়নি। তিন ঘণ্টার জন্য মুক্তি পেলেও তিনি মাত্র এক ঘণ্টার মতো ছিলেন। দাফনের পরই পুলিশ তাকে নিয়ে যায়।
আলী আজমের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার লিপি বলেন, জামিনের চেষ্টা করেছি, কিন্তু জামিন হয়নি। পরে আবেদন করে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় আসেন। ডাণ্ডাবেড়ি খোলার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবরে আলী আজমকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জানাজার সময় হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় কৃষক দলের ভাইস চেয়ারম্যান বোয়ালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আ ন ম খলিলুর রহমান ইব্রাহিম বলেন, আলী আজম খান একজন ভালো মানুষ। শুধু রাজনীতি করার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি নন। বিষয়টি অমানবিক।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান বলেন, প্যারোলে মুক্তির পর বিএনপি নেতা আলী আজমকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। ডাণ্ডাবেড়ির বিষয় আমাদের নয়। আমরা শুধু নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম।
গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা এবং জেল আইন অনুযায়ী তাকে পাঠানো হয়।
জানা যায়, আলী আজমের বৃদ্ধ মা রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান। সংবাদ পেয়ে শেষবারের মতো মাকে দেখতে ও জানাজা পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে প্যারোলে মুক্তি চান তিনি। আদালত তাকে মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেন। এরপর আলী আজমকে হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে পাবুরিয়াচালা এলাকায় নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। ওই অবস্থায়ই তিনি মায়ের জানাজা পড়ান।