শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৯ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা বিএনপি

৩ মাস পর প্রকাশ্যে এলো বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর


নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১২ জানুয়ারি, ২০২২ ৩:৩০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

যুক্তরাজ্যে তিন মাস আগে মারা গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হারিছ চৌধুরী।

আজ বুধবার দুপুরে তার চাচাতো ভাই ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর বিষয়টি জানাজানি হয়।

তিনি তার ফেসবুক আইডিতে হারিছ চৌধুরী ও তার ছবি সংযুক্ত করে লেখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’।

এরপর থেকে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাসহ অনেকে মন্তব্যের ঘরে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

আশিক উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, হারিছ চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লন্ডনে থাকতেন তিনি। গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। কয়েকদিন পর তার করোনাভাইরাসের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সাময়িকভাবে কোভিডের ধকল কাটিয়ে উঠলেও তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় একপর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান। তাকে লন্ডনে দাফন করা হয়েছে।

লন্ডনের কোন এলাকায় তিনি মারা গেছেন-সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এ সদস্য।

এতো দেরিতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানানো প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হলে আশিক উদ্দিন চৌধুরী জানান, তখন তিনি (আশিক চৌধুরী) যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। যে কারণে তিনি তখন মৃত্যুর খবর জানাতে পারেননি।

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। পাশাপাশি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবও ছিলেন তিনি। সে সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর।

জানা গেছে, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকতেন। তার ছেলে জনি চৌধুরী পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। আর মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার।

আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন।

২০০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একবার রক্ত পরিবর্তন করেন।

দেশ থেকে পালানোর পর তিনি যুক্তরাজ্যে আরেকবার রক্ত পরিবর্তন করেন বলে পারিবারিক সূত্র জানায়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত হওয়ার আগে হারিছ চৌধুরী করোনাভাইরাসের দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর তার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং পুরো ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে পড়ে।

ফলে করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ার পরও তিনি ফুসফুস জটিলতায় ভুগছিলেন।

জানা যায়, ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির সপ্তাহখানেক পর স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে বেড়াতে আসেন হারিছ চৌধুরী।

ওই রাতেই যৌথবাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তখন তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর কয়েক দিন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন।

জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান বিএনপি সরকারের দাপুটে এই নীতিনির্ধারক।

এরপর তিনি ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে নানার বাড়িতে ওঠেন।

সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে ইরানে তার ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে পৌঁছান এমন খবরও শোনা যায়।

কয়েক বছর সেখানে থেকে যুক্তরাজ্যে পরিবারের কাছে যান তিনি। সেখান থেকে ভারতে যাতায়াত করতেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতেন বলে একাধিক সূত্র বিভিন্ন সময় নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর।

একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়।

আরও পড়ুন: ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলে আ. লীগ ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতো না’

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর