রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা মতামত

দুবাই থেকে জেনারেল আজিজ কী বলতে চেয়েছেন?



তারিক চয়ন প্রকাশের সময় :২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১:০৩ : অপরাহ্ণ

গত ২৪শে ডিসেম্বর জার্মানির সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বহুল আলোচিত, সদ্য সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সেখানে ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনের সঙ্গে আলোচনায় নিজের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছেন জেনারেল আজিজ।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যচিত্র, নিজ ভাইদের ‘অপকর্মের’ সাথে জড়িয়ে নানা অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে নিজের ভিসা বাতিলসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়েছে।

বলাবাহুল্য, সবগুলো অভিযোগই অস্বীকার করেছেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাংবাদিক খালেদ বরাবরের মতোই জার্মানির বন শহর থেকে সবাইকে স্বাগত জানালেও জেনারেল আজিজ কোন দেশের কোন শহর থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়েছেন তা দর্শকদের জানানো হয়নি।

তবে জানা গেছে, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে ওই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন।

জেনারেল আজিজের দেয়া সাক্ষাৎকার যারা দেখেছেন তারা প্রায় সবাই বলছেন, তাকে করা বিভিন্ন প্রশ্নের (সবই ছিল অভিযোগ) কোনোটিরই উত্তর তিনি এক কথায় দেননি অর্থাৎ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেন নি।

গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তাকে করা একেবারে প্রথম প্রশ্নটি ছিল ‘আপনার কি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যালিড ভিসা আছে এই মুহুর্তে?’

এমন প্রশ্নের জবাবে আজিজ অনেক কথাই বলেছেন।

তবে সবচেয়ে সুস্পষ্ট জবাবটি ছিল ‘এজ ফার এজ আই অ্যাম কনসার্ন, ইয়েস (আমি যতটুকু জানি, আছে)’।

সাংবাদিক খালেদ অনেকভাবে সরাসরি উত্তরটি জানতে চাওয়ার চেষ্টা করলেও আজিজ একবারও শুধুই ‘ইয়েস’ বা ‘হ্যাঁ’ বলেননি।

সেনাপ্রধানের দায়িত্ব ছাড়ার পরপরই তার ব্যক্তিগত সহকারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে খবর বের হয়েছিল।

তার ‘ব্যক্তিগত সহকারী’কে দুর্নীতি বা মিসকন্ডাক্টের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবও তিনি সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ তে দেননি।

তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আমি যখন রিটায়ারমেন্টে আসি, তখন শুনেছি সে অবসরে গেছে।…’

‘আপনি কি স্পাইওয়্যার কেনা নিয়ে জনাব সামির সাথে কথা বলেছিলেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরও তিনি সরাসরি দেননি।

প্রথমে শুধু বিস্ময় আর কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘আমি কবে সেনাপ্রধান হয়েছি! আর এটা কেনার প্রক্রিয়া কবে থেকে শুরু হয়েছে!’

পরে অবশ্য তিনি এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

স্পাইওয়্যার কেনা নিয়ে ভাইদের জড়িয়ে তার দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করা হলে তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে ব্যাখ্যা করে জানান যে, এসব ক্রয়ের প্রক্রিয়া একদিনে হয় না, তিনি সেনাপ্রধান হওয়ার আগেই ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

কিন্তু তার ব্যাখ্যায় দেয়া বিভিন্ন দিন-তারিখ শুনে সাংবাদিক খালেদ মুচকি হেসে প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে আপনি সেনাপ্রধান হওয়ার একদিন পরই এটা কেনার চুক্তি হয়?’

আজিজ অবশ্য সেটা স্বীকার করে আবারো বলেন, ‘সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তো অনেক আনুষ্ঠানিকতা থাকে, একদিন পর এটা কেনায় প্রভাব খাটানো সম্ভব নয়।’

এছাড়া, আরেকটি কাকতালীয় ঘটনা নিয়েও খালেদ কথা বলেন। সেটি হলো, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জেনারেল আজিজের ভাইদের ক্ষমা ঘোষণা করার পরদিনই তাদের তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়।

এ বিষয়ে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘শুধুতো বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল না। গায়েহলুদসহ আরো অনেক অনুষ্ঠান ছিল। সেগুলোতে তাদের দেখা যায়নি।’

আল জাজিরার তথ্যচিত্র প্রচারের পরই জানা যায়, তার ভাইদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য সরাসরি কোনো জবাব দেননি জেনারেল আজিজ।

‘আপনার ভাইয়েরা ভিন্ন নাম, ঠিকানা, পরিচয় ডকুমেন্ট করে যখন জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করেছিলেন সেসময় বিজিবির অফিসার বা অধস্তনরা সেগুলোতে স্বাক্ষর করেছিলেন, এতে বুঝা যায় কিনা সেটা করতে তারা আপনার প্রভাব খাটিয়েছিলেন?’

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আই ডোন্ট থিংক সো। এই ধরনের কোনোকিছু হয়েছে কিনা আমার ঠিক জানা নেই। এ ধরনের করার প্রসঙ্গ এসেছিল কিনা আমার ঠিক মনে পড়ছে না।’

আপন ভাইয়েরা নিজের নাম, মা-বাবার নাম, স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে অন্য সব নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে বসবাস করছেন-এমন অভিযোগ পরোক্ষভাবে স্বীকার করে জেনারেল আজিজ উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি যারা প্রবাসে আছে তারা তাদের নাম, পিতৃ পরিচয় বা ঠিকানা কি অ্যাকচুয়েলটা (সত্যিকার) ইউজ (ব্যবহার) করছে?’ তিনি একাধিকবার এমন কথা বলেন।

আরও পড়ুন: পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী

উল্লেখ্য, জেনারেল আজিজের এমন কথায় লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভীষণ দুঃখ পেয়েছেন।

অনেক প্রবাসীই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তার এমন বক্তব্যে তারা অপমানিত বোধ করছেন।

কারণ নামমাত্র দু-চারজন বাংলাদেশের অপরাধী হয়তো নিজের নাম, মা-বাবার নাম এবং নিজের আদি ও অকৃত্রিম ঠিকানা পরিবর্তন করে বিদেশে বসবাস করছেন, বাকিরা তো এমন কাজ করেননি! তিনি কেন তাদের সবাইকে ঢালাওভাবে দোষী করলেন? এমন প্রশ্ন তাদের।

আল-জাজিরার তথ্যচিত্রে জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার একজন কোর্সমেটের কথোপকথন ফাঁস করা হয়।

তার দাবি, ফাঁস হওয়া অডিওটি সঠিক নয়।

এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী (২০২২) জুনের ২৫ তারিখের পর আমার সম্পূর্ণ রিটায়ারমেন্ট শুরু হবে। তখন আমি চিন্তা করবো এ ব্যাপারে কী করা যায়।’

কিন্তু অনেকের প্রশ্ন, জেনারেল আজিজ যদি তার চাকরির বর্তমান অবস্থায় টকশোতে এসে এমন সব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন, তবে আর এতো অপেক্ষা কেন?

সূত্র: মানবজমিন

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর