শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৭ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

আবদুচ ছালাম: একজন আলোর ফেরিওয়ালা


মোরশেদ আলম প্রকাশের সময় :৩ মার্চ, ২০২৩ ১০:৫২ : পূর্বাহ্ণ
আবদুচ ছালাম
Rajnitisangbad Facebook Page

“Lady with the lamp” (আলোকবর্তিকা হাতে আবির্ভূত নারী) সারা বিশ্বে বিপুলভাবে সমাদৃত একটি নামকরণ। বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত বিশাল জনগোষ্ঠীর ঝাপসা চোখের সামনে আলোর ঝর্ণাধারা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন যে মহীয়সী নারী, ওনার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ এই উপাধি “লেডী উইথ দ্যা ল্যাম্প”।

১৮২০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্ম নেয়া ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল’ এর সমস্ত জীবনটাই মানুষের জন্য ভালোবাসা ও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। ‘ভালোবাসার বিপরীতেই শুধু ভালোবাসা নয়, ঘৃনার বিপরীতেও ভালোবাসা’ সারাজীবন এই নীতিতে বিশ্বাসী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পারিবারিক অপরিমিত প্রাচুর্য্য, বিত্তবৈভব ও বর্ণনাতীত সুখ সাচ্ছন্দ্যকে অবলীলায় পেছনে ফেলে মানব সেবাতেই খুঁজে নিয়েছিলেন জীবনের নির্যাস। মৃত্যুর ১২২ বছর পরেও এই মহান নারীকে মানুষ পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। ওনার প্রতি মানুষের ভালোবাসা এতটুকু কমেনি বরং বেড়েছে।

লক্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে, ‘অবতার’ কখনো নিশ্চিহ্ন হয়না বা ফুরিয়ে যায়না। তারা ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন পরিচয়ে, ভিন্ন ভিন্ন সমাজে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হন ও সময়ের প্রয়োজনেই বিকশিত হন।

কালের বিবর্তনে বাংলাদেশও পেয়েছে তেমনি এক নারী যিনি আলোক বর্তিকা হাতে অবতীর্ণ হয়েছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি জাতিকে আলোর পথ দেখাতে, পিছিয়ে পড়া একটা মানবগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে। যার শিরায় প্রবাহিত জাতির জনকের উষ্ণ রক্তধারা। যৌবনের প্রারম্ভেই যিনি দেখেছেন দেশবিরোধী চক্রের হাতে ওনার পরিবারের প্রায় সব সদস্যের নির্মম হত্যাকান্ড। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ঘাত প্রতিঘাত আর রক্তস্নাত পথ পাড়ি দিতে দিতে উনি নিজেই নীলকন্ঠে পরিণত হয়েছেন।

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মিশ্রিত নামগুলো সাধারণত ছোট হয়। বিপ্লবী আর্নেস্তো চে গুয়েভারাকে কিউবানরা আদর করে শুধু ‘চে’ ডাকতো। তিনি পরবর্তীকালে বিশ্ববাসীর কাছে ‘চে’ নামেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন।

শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী, গনতন্ত্রের মানসকন্যা সবকিছু ছাপিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন একটি নামে ‘নেত্রী’।

দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তিপাগল একটা জাতির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’, তারই ধারাবাহিকতায় একটি জাতির মাথাতুলে দাঁড়াবার প্রেরনা দাত্রী হয়ে উঠলেন ‘নেত্রী’।

কিন্তু নেত্রীর স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ হাতিয়ার দরকার। নেত্রী যদি স্বপ্নদ্রষ্টা হন ওনার দরকার স্বপ্নের রূপকার, নেত্রী যদি আলোকবর্তিকা হাতে নারী হন ওনার দরকার ‘আলোর ফেরিওয়ালা’।

দীর্ঘ রাজনৈতিক ছড়াই উতরাই পেরিয়ে ‘নেত্রী’ এইটুকু অনুধাবন করেছিলেন ১৯৭৫-১৯৯০ এর সামরিক শাসন, ১৯৯১-১৯৯৬ এর গনতন্ত্রের ছদ্মাবরণে বিএনপি-জামাত চক্রের দুঃশাসন এবং ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-বিএনপির নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট সরকারের অপশাসনের প্রকোপে কোন রাষ্ট্র প্রধানই সময়ের দাবীর সাথে তাল মেলাতে পারেন নি।

তাই ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েই ‘নেত্রী’ সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ নামক দেশটাকে বিশ্বের বুকে দাঁড় করাতে হলে টেকসই অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, সেই স্বপ্নের শাব্দিক পরিচয় ‘ভিশন২১’। যেকোনো মুল্যে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দারিদ্রতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে উনি ছিলেন বদ্ধপরিকর।

লেখার শুরুতে আমি আলোকবর্তিকা হাতে নারীর কথা বলেছি, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে নেত্রী সত্যিকার অর্থেই আলোকবর্তিকা হাতে নারী রূপেই অবতীর্ণ হলেন, দেশ পেলো বহু আকাঙ্খিত ‘অবতার’।

প্রতিটা জেলায় একজন আলোকিত মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। তবে বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামের মাটিতেই জন্মেছেন, বেড়ে উঠেছেন আবদুচ ছালাম নামক একজন কঠোর কর্মী। “রতনে রতন চেনে” এই আপ্তবাক্যকে সঠিক প্রমাণ করে নেত্রী বেছে নিলেন আবদুচ ছালামকে।

২০০৮ সালে নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রামবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজ হাতে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার যে দায়িত্ব, তা বাস্তবায়নে গৎবাঁধা আমলা নির্ভর না হয়ে ‘নেত্রী’ জনবান্ধব এবং সততা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে আপোষহীন আবদুচ ছালামের হাতেই আলোকবর্তিকা তুলে দিলেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ধারক আবদুচ ছালাম হয়ে উঠলেন একজন ‘আলোর ফেরিওয়ালা’।

নেত্রী প্রদত্ত দায়িত্বকে ‘ইবাদত’ হিসেবে গ্রহন করে আবদুচ ছালাম চির অবহেলিত চট্টগ্রাম শহরকে নতুন আলোয় রাঙিয়ে দিতে মাঠে নেমে পড়লেন। কিন্তু স্বপ্নদেখা, পরিকল্পনা, কর্মপন্থা নির্ধারণ শব্দগুলো পরপর লিখে ফেলা যত সহজ বাস্তবায়ন করা হাজারগুন কঠিন, সেই কঠিন কাজগুলো সুনিপুণ হাতে সম্পাদন করেছেন আবদুচ ছালাম।

একজন ভালো দলনেতা দলের সবাইকে ভালো খেলতে উদ্বুদ্ধ করে, কিন্তু অসাধারণ দলনেতা দলের সবাইকে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর করে তোলে।

‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’ নামক সীমিত পরিধির একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এর দায়িত্বে নিয়োজিত হয়ে আবদুচ ছালাম ৪০ বছর ধরে অযত্ন অবহেলায় পিছিয়ে পড়া চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজাবার কঠিন সংগ্রাম শুরু করেন।

নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতেন, জানতেন বলেই নিজের অধীনস্থ সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে। জাতীয় কবির সেই অমর কবিতার মতো…
আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে পড়বো লুটে।

যে সময়টাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় ইউরোপ আধুনিক ইউরোপে রূপান্তরিত হয়েছিল, সে সময়কে বলা হয় ‘রেনেসাঁস'(Renaissance)।

আবদুচ ছালাম সিডিএ এর চেয়ারম্যান হিসেবে থাকা ১০ বছর আক্ষরিক অর্থেই চট্টগ্রামের ‘উন্নয়ন রেনেসাঁস’। রেনেসাঁস এর সময় ইউরোপ বাকী বিশ্ব থেকে ১০০ বছর এগিয়ে যায়।

একথা অনস্বীকার্য আবদুচ ছালামের ১০ বছরে চট্টগ্রামে অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হয়, স্বাধীনতার পর হতে ১৯৭১-২০০৮ পর্যন্ত সময়ে তার সিকিভাগও হয়নি।

আল বেরুনী তার ‘ভারততত্ত্ব’ বইতে লিখেছেন “পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন ছোট, ছোটমনের মানুষ ছোট ছোট রাস্তা তৈরী করেছে। যার ফলে সে অঞ্চলের মানুষ চলমান বিশ্বের চেয়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে”।

আবদুচ ছালাম দায়িত্ব নেয়ার সময় চট্টগ্রাম শহরের রাস্তাগুলো আল বেরুণীর কথারই সত্যতা প্রমাণ দিতো। দায়িত্বের প্রথমেই আবদুচ ছালাম নজর দেন যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। তিনি বিশ্বাস করতেন, নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যাবস্হা একটা শহরের আধুনিকায়নের পূর্বশর্ত।

কিন্তু শত বছর ধরে গড়ে উঠা স্থাপনা সরিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করা সহজ কাজ নয়। আবদুচ ছালাম নামক যাদুর কাঠির পরশে সে কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়। তিনি পাঁচশত এর বেশি উঠান বৈঠক করেছেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছে দিয়েছেন, কিন্তু কোথাও বাস্তুহারা মানুষের কান্নার রোল পড়েনি।

তিনি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন শহরটা শহরবাসীর। অনেক বসতবাড়ি, মসজিদ, সামাজিক স্থাপনা, দোকানপাট, মাদ্রাসা, মন্দির, প্যাগোডা, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করতে হয়েছে। যেখানেই তিনি রাস্তা সম্প্রসারণ করেছেন, পাশাপাশি নালা নির্মাণ করেছেন। তিনি অর্ধেক কাজ করা অপছন্দ করতেন।

তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার প্রধান ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ‘সানজি টেক্সটাইল মিলস্ এর বিল্ডিংটা হলো পার্ট পার্ট। আমাকে একটু একটু করে কারখানাটি বড় করতে হয়েছে। সামর্থ্যের অভাবে একসাথে করতে পারি নাই। কিন্তু আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী কর্তৃক অর্পিত চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি সুচারুরূপে করতে চাই”।

কোথায় হাত দেননি আবদুচ ছালাম?
কাপাসগোলা হতে চকবাজার রোড সম্প্রসারণ, চকবাজার হতে আন্দরকিল্লা রোড সম্প্রসারণ, কালুরঘাট হতে বহদ্দারহাট রোড সম্প্রসারণ, আন্দরকিল্লা হতে লালদীঘি রোড সম্প্রসারণ, কোতোয়ালী মোড় হতে ফিরিঙ্গী বাজার রোড সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মান, সদরঘাট রোড সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মান, ডিসি রোড ও পাঠানটুলী রোড সম্প্রসারণ, কর্ণফুলী মার্কেট হতে এক্সেস রোড সম্প্রসারণ ও দুইপাশে ড্রেন নির্মান, কমার্স কলেজ রোড সম্প্রসারণ, অক্সিজেন হতে প্রবর্তক মোড় রোড, ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড, সাগরিকা রোড, অক্সিজেন হতে মুরাদপুর হয়ে অলি খাঁ মসজিদ রোড, অক্সিজেন হতে কুয়াইশ রোড সম্প্রসারণ (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ), কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকা ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা রোড সম্প্রসারণ, মোহরা এনেক্স শিল্প এলাকা রোড সম্প্রসারণ, ও মোহরা এলাকার ২০ কিলোমিটারের অধিক রাস্তার কাজ তিনি সম্পাদন করেন।

‘নেত্রীর’ কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়ার ফলে চট্টগ্রাম শহরকে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপমুক্ত করতে আবদুচ ছালাম বেশকিছু যুগান্তকারী প্রকল্প হাতে নেন।

বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, মুরাদপুর হতে লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, কদমতলী ফ্লাইওভার, দেওয়ানহাট ওভারপাস নির্মান করে আবদুচ ছালাম চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যাবস্হায় আধুনিকতার ছোঁয়া দেন।

সাগরপাড়ের সিটি আউটার রিং রোড, ফৌজদার হাট হতে বায়েজিদ বাইপাস রোড, চন্দনপুরা হতে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক (বাকলিয়া এক্সেস রোড) বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রাম শহরকে যানবাহনের বাড়তি চাপ থেকে অনেকটা মুক্ত রেখেই উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকা তথা সারাদেশের যোগাযোগ ব্যাবস্হা সহজতর করা হয়েছে।

লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত ১৬ কিঃমিঃ দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ তিনিই শুরু করেছিলেন, কিন্তু সে প্রকল্প এখনো শেষ না হওয়াতে চট্টগ্রামবাসী তার সুফল পেতে শুরু করেনি।

কর্ণফুলীর তীরে চাক্তাই খালের মুখ হতে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ৮-৫০ কিঃমিঃ দীর্ঘ রিং রোড কাম শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এখনো বাস্তবায়নাধীন।

এসব মেগাপ্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যাবস্হায় যে আমূল পরিবর্তন আসবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

প্রতিটা মেয়র নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং নির্বাচনের পরে অপারগতা স্বীকার করা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছিল। এই অভিশাপ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আবদুচ ছালাম আরও একটি মেগাপ্রকল্প প্রণয়ন করেন। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে এখনো বাস্তবায়নাধীন।

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এই তিন খাতেই আবদুচ ছালাম মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কল্পলোক ও অনন্যা আবাসিক প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন, নারী শ্রমিকদের জন্য সিমেন্ট ক্রসিংয়ে গড়ে তুলেছেন ডরমেটরী, সিডিএ স্কয়ার ফ্ল্যাট, দেওয়ানহাট ফ্ল্যাট, কাজীর দেউড়ী ফ্ল্যাট তারই চেষ্টার ফসল।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন আবদুচ ছালাম। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ম্যুরাল ও কোর্ট হিলে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেন তিনি। তারই পরিকল্পনায় অনন্যা আবাসিকে প্রতিষ্ঠা হয় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ‘এভারকেয়ার হাসপাতাল’।

তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ এর আধুনিকায়নে কাজ করেন। তিনি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের শরীরচর্চার কথা বিবেচনা করে অবহেলিত প্যারেড মাঠে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাজ করেন, জরাজীর্ণ জিমনেসিয়ামটিকে সংস্কার করেন। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও সিডিএ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ।

অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, আমি পুরো লেখায় সিডিএ এর চেয়ারম্যান এর পদবী বা প্রতিষ্ঠানের নাম না লিখে শুধু আবদুচ ছালাম লিখেছি কেন? আমি সচেতনভাবেই লিখেছি। একটা সময় চট্টগ্রাম এর মানুষ উন্নয়ন ও সিডিএ এ দুটোকে সমার্থক মনে করতো। কিন্তু সেই মোহভঙ্গ হয়েছে।

বিগত সময়ে আবদুচ ছালামবিহীন সিডিএ এর কর্মকাণ্ড দেখে মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে সিডিএ নয়, উন্নয়ন ও আবদুচ ছালামই সমার্থক।

তিনি নিজের মেধা, শ্রম, অধ্যবসায়, কর্মনিষ্ঠা, সততা, নিজের জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দিয়ে প্রমাণ করেছেন ‘নেত্রী’ যদি আলোকবর্তিকা হাতে আবির্ভূত নারী (লেডী উইথ দ্যা ল্যাম্প) হন, তাহলে আবদুচ ছালামই সেই আলোর ফেরিওয়ালা।

সেই আলোক বর্তিকা হাতে তিনি ১০টি বছর ছুটে বেড়িয়েছেন চট্টগ্রাম শহরের পথে প্রান্তরে, আর আলোয় সজ্জিত করেছেন আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামকে। তার হাতেই ১০ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্ম সম্পাদন হয়েছে, যা একটা জেলা শহরের জন্য অভাবনীয়।

এ অভুতপূর্ব উন্নয়ন চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রিয় নেত্রীর নিগুঢ় ভালোবাসা ও আবদুচ ছালামের প্রতি অগাধ আস্থার ফসল।

পেরিক্লিয়াস এথেন্স নগরকে সম্ভাবনার স্বর্নদুয়ারে পৌঁছে দিয়েছিলেন আর তাতেই গড়ে উঠেছিলো গ্রীক সভ্যতার ভিত। খলিফা হারুন অর রশিদ আপন মনের মাধুরী দিয়ে বাগদাদ নগরী সাজিয়েছিলেন। লি কুয়ান ইউ নিজের স্বপ্ন দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন আধুনিক সিঙ্গাপুর। আবদুচ ছালামের হাতে পুনরুজ্জীবন প্রাপ্ত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরী।

চট্টগ্রামবাসীর সুখস্বপ্ন ধীরে ধীরে ধুসর স্মৃতিতে পরিণত হচ্ছে। চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবর্তমানে চট্টগ্রামের রাজনীতি যেমন অবিভাবকহীন, কর্মবীর আবদুচ ছালামের অনুপস্থিতিতে চট্টগ্রামের উন্নয়নের গাড়িও তেমনি চালকবিহীন।

ফুটবল বিশ্বে তুমুল জনপ্রিয় আর্জেন্টিনা দল ২৮ বছর কোনো শিরোপা জেতেনি। যখনি প্রশ্ন করা হয়, কেন? ভক্তদের একটাই উত্তর, ‘ম্যারাডোনা নেই বলে’। তেমনি চট্টগ্রামের উন্নয়ন রেনেসাঁস মুখ থুবড়ে পড়লো কেন? একটাই উত্তর, ‘আবদুচ ছালাম নেই বলে’।

সিডিএ চেয়ারম্যান এর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আবদুচ ছালাম চট্টগ্রামবাসীকে তাদের স্বপ্নের কাছাকাছিই শুধু নিয়ে যাননি, তাদের স্বপ্নের পরিধিও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন, একসময়ের সূদুর কল্পনাকে সম্ভাব্য চাওয়াতে রূপান্তরিত করেছেন।

জনগনের এ বিপুল চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রিয় নেত্রী একজন আবদুচ ছালামকে আরও বড় পরিসরে, ভিন্ন আঙ্গিকে উপহার দিবেন এটাই চট্টগ্রামবাসী কায়মনোবাক্যে প্রত্যাশা করে।

‘চট্টগ্রামের উন্নয়নের মানসপুত্র ছিলেন আবদুচ ছালাম’ এ দীর্ঘশ্বাস আমরা না হয় আগামী প্রজন্মের জন্য তুলে রাখি। প্রিয় নেত্রীর হাতের আলোকবর্তিকাটি আরেকবার আবদুচ ছালামের হাতে তুলে দেয়া হোক। চট্টগ্রামের আকাশে উন্নয়ন সূর্যের বিচ্ছুরিত রশ্মি ছড়িয়ে পড়ুক।

আলোকিত মানুষের ছোঁয়ায় আলোকিত হোক প্রিয় চট্টগ্রাম।

লেখক: মানবাধিকার কর্মী

আরও পড়ুন: বোয়ালখালীবাসী মনে করছে, আমি এমপি হলে নতুন কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন হবে

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর