শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রামবাসীর প্ল্যাটফর্ম ‘উই আর চিটাগং’


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ৫:৩০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রামে যে কোনো নাগরিক সমস্যা সমাধানে কিংবা যে কোনো তথ্যের সন্ধানে সহায়তা পাওয়া যায় ‘We Are Chittagong (WAC)-উই আর চিটাগং (ওয়াক)’ নামে ফেসবুকভিত্তিক কমিউনিটি গ্রুপে।

এই গ্রুপটি চট্টগ্রামবাসীর কাছে একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের তরুণ কাজী ইমরান চৌধুরীর হাত ধরে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ‘পরিবর্তন আসবেই’ স্লোগান নিয়ে ‘উই আর চিটাগং (ওয়াক)’ এর যাত্রা শুরু হয়।

মূলত করোনাকালীন সময়ে চট্টগ্রামবাসীর পাশের থাকার প্রেরণা থেকেই তিনি স্বেচ্ছাসেবামূলক ফেসবুকভিত্তিক এই কমিউনিটি গ্রুপটি চালু করেন।

প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চট্টগ্রামে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে এ গ্রুপটি।

গ্রুপটি চালু হওয়ার প্রথম দুই সপ্তাহে সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর প্রতিদিন ১ হাজার করে সদস্য যুক্ত হয় এই গ্রুপে।

দুই মাসের মধ্যে সদস্য সংখ্যা পৌঁছে ৩০ হাজারে।

এক পর্যায়ে এই গ্রুপটি ‘সন্ধান, সাহায্য ও সচেতনতার’ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠে।

প্রতিষ্ঠার ১ বছর ৯ মাসের মধ্যে ‘ওয়াক’ এর সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার পেরিয়ে গেছে।

চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন মতের ও পেশার মানুষ এই গ্রুপটির সঙ্গে যুক্ত।

আরও পড়ুন: ৪২ কোটি টাকার মুকুট মাথায়, আরও যেসব সুবিধা পাচ্ছেন বিশ্বসুন্দরী হারনাজ

‘ওয়াক’ এর শুরুর গল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘উই আর চিটাগং’ এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডমিন কাজী ইমরান চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘গত বছরের মার্চে করোনার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে আমি গ্রুপটি চালু করি। শুরুতে করোনা বিষয়ক আপডেট তথ্য দ্রুত পোস্ট করার ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গ্রুপটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। দুই মাসের মধ্যে সদস্য সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে ‘ওয়াক’ এ ১ লাখ ১৭ হাজার সদস্য রয়েছে।’

করোনা ইস্যুতে চালু হওয়া এই গ্রুপটি পরবর্তীতে কীভাবে সন্ধান, সাহায্য ও সচেতনতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠলো?-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রুপে শুরুতে করোনা বিষয়ক তথ্য শেয়ার করেছিলেন সদস্যরা। এক পর্যায়ে সদস্যরা বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা সমাধানে, চাকরীর সন্ধানে, ডাক্তার কিংবা রক্তদাতার সন্ধানে, হারিয়ে যাওয়া কোনো জিনিস কিংবা নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে সহায়তা চেয়ে পোস্ট করতে থাকেন। ‘ওয়াক’ এ পোস্ট করে অনেক মানুষ নিখোঁজ আত্বীয়ের সন্ধান পেয়েছেন, জরুরী প্রয়োজনে রক্তের সন্ধান পেয়েছেন, অনেকে চাকরীর সন্ধান পেয়েছেন। মানুষ এখন যে কোনো হেল্প পেতে এই গ্রুপে পোস্ট করে থাকেন। কোনো বিষয়ে সমাধান পেতে দেরি হলে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে দেওয়ারও চেষ্টা করি।’

এই গ্রুপে পোস্ট করে নাগরিক সমস্যার সমাধান হয়েছে-এমন একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনার কথা তুলে ধরে কাজী ইমরান বলেন, ‘নগরীর বায়েজিদ এলাকায় একটি স্কুলের সামনে উন্মুক্ত স্থান থেকে ডাস্টবিন সরাতে ১০ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বছর খানেক আগে ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থী এ বিষয়ে ওয়াক গ্রুপে একটি পোস্ট করেন। বিষয়টি সিটি করপোরেশনের নজরে আসলে তৎকালীন প্রশাসকের নির্দেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই স্কুলের সামনে থেকে ডাস্টবিনটি সরিয়ে ফেলা হয়।’

আরও পড়ুন: এবার ব্যাংকের মালিক হচ্ছেন সাকিব আল হাসান

তাহলে পরিবর্তন আসছে-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোনো এলাকায় কোনো নাগরিক সমস্যা থাকলে তা নিয়ে সবাই কথা বলে না। এই গ্রুপটি যে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সমাজে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে।’

গ্রুপটির নাম ‘উই আর চিটাগং’ কেন?-এই প্রশ্নের জবাবে কাজী ইমরান বলেন, ‘দেশের আলোচিত ফেসবুকভিত্তিক কমিউনিটি গ্রুপ ‘উই আর বাংলাদেশ-ওয়াব’ কে অনুসরণ করে আমরা এই নামকরণ করি।’

কিন্তু নামের মধ্যে সরকারীভাবে প্রচলিত চট্টগ্রাম না লিখে কেন চিটাগং লেখা হয়েছে-এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘শুরুতে ভুলবশত আমরা চিটাগং শব্দট লিখেছি। এখন আমরা চিটাগং শব্দটা পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফেসবুকে গ্রুপের নাম পরিবর্তনের নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে আমরা চট্টগ্রাম শব্দটা যুক্ত করে দিবো।’

‘ওয়াক’ এর লক্ষ্য কী? জানতে চাইলে কাজী ইমরান বলেন, ‘এই গ্রুপের উদ্যোগে সমাজের অসহায় মানুষদের ফ্রি খাওয়ানো এবং বঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি ফ্রি স্কুল করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

জানা গেছে, চট্টগ্রামে ‘ওয়াক’ এর মতো এতো বৃহৎ পরিসরের কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম আর নেই।

We Are Chittagong (WAC)

‘ওয়াক’ গ্রুপটি পরিচালনার জন্য ১২ সদস্যের অ্যাডমিন ও মডারেটর প্যানেল রয়েছে।

প্যানেলের সদস্যরা হলেন-কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল (অ্যাডভাইজার অ্যাডমিন), হাবীবুল আলম পেয়ারু (অ্যাডভাইজার অ্যাডমিন), কাজী ইমরান চৌধুরী (প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডমিন), নাজমুল শাওন (অ্যাডমিন), শুভ বড়ুয়া (অ্যাডমিন), মোহাম্মদ অর্জন (অ্যাডমিন), মিম চৌধুরী (অ্যাডমিন), নাসিম ইভান (অ্যাডমিন), আশরাফ আহমেদ (মডারেটর), নাজিম উদ্দিন (মডারেটর), সৈয়দ তানভীর (মডারেটর) এবং ইসরাত প্রিয়া (মডারেটর)

আরও পড়ুন: মাত্র ৬০ টাকায় কোটিপতি ভ্যানচালক ফজলে মিয়া

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত এসব অ্যাডমিন ও মডারেটরদের কেউ শিক্ষার্থী, কেউ চাকরীজিবী, আবার কেউ ব্যবসায়ী। কিন্তু তারা সবাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রুপে কাজ করেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডমিন কাজী ইমরান চৌধুরী।

‘ওয়াক’ এর অ্যাডমিন ও মডারেটররা জানিয়েছেন, সদস্যদের বিভিন্ন পোস্ট রিকোয়েস্ট তারা যাচাই করে গ্রুপে অনুমোদন দেন।

‘ওয়াক’ এর অ্যাডমিন নাজমুল শাওন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘অনেকে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার জন্য ভুয়া, বিভ্রান্তিমূলক বা সাজানো ঘটনা পোস্ট করেন। আবার কেউ ফেক আইডি থেকে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভুয়া ও বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করেন। এসব পোস্ট আমরা অনুমোদন দিই না। গ্রুপে কেউ ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট রিকোয়েস্ট ও আপত্তিকর কমেন্ট করলে তাকে প্রথমে সতর্ক ও পরে তার আইডি ব্লক করে দেওয়া হয়।’

‘ওয়াক’ এর মডারেটর নাজিম উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে সদস্যদের ৬০০টি পোস্ট রিকোয়েস্ট আসে। এর অধিকাংশই হলো স্বাস্থ্যবিষয়ক পোস্ট। এছাড়া চাকরী সংক্রান্ত অনেক পোস্ট আসে। আমরা দৈনিক গড়ে ২০০-২৫০টি পোস্ট অনুমোদন দিয়ে থাকি।’

আরও পড়ুন: কিষোয়ানের বিস্কুটের ভেতরে দেড় ইঞ্চি লম্বা হিজাব পিন!

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর