বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ | ১৭ রমজান, ১৪৪৫

মূলপাতা আইন-আদালত

দিনে ‘পীর’, রাতে তিনি ‘গে অ্যাকটিভিস্ট’


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:১৫ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

আব্দুল মুত্তালিব চিশতি। ভক্তদের কাছে তিনি ‘পীর চিশতি’ নামে পরিচিত। পরনে থাকে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা। তার উপরে মুজিব কোট। মাথায় লম্বা টুপি, মুখে অ্যারাবিয়ান ছাগদাড়ি। সপ্তাহান্তে যখন তার বাসায় জিকিরের হিড়িক পড়ে নর নারীর, তখন কাফনের সাদা কাপড় পরেই তিনি বয়ান করেন এবং লম্বা মুনাজাত ধরেন।

ভক্ত আশেকানগণ ভাবে গদগদ হয়ে অশ্রু বিসর্জন দিলেও চোখ বুজে থাকা আব্দুল মুত্তালিব কখনও কখনও চোখ খুলে সন্ধান করেন শিকারের; কাকে টার্গেট বানানো যায় ‘গে অ্যাকটিভিজমের’ প্যাসিভ পার্টনার হিসেবে। পবিত্র কোরআনের সর্বসাকুল্যে ৩টি সূরা জানা আব্দুল মুত্তালিবের জন্য পীরবাদ, চিশতিয়া ত্বরিকা যৌন হয়রানি এবং ব্যবসার একটা কৌশল মাত্র!

অবশেষে গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে আবদুল মোত্তালিবের এমন সব ভণ্ডামি ও প্রতারণার কৌশল।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে এই ভণ্ড পীর ও প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের একটি টিম। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

রাজনীতিকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভণ্ড পীর আব্দুল মোত্তালেব চিশতি একটি চক্রকে নিয়ে তৈরি করেন আওয়ামী নির্মাণ শ্রমিক লীগ। বাগিয়ে নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি পদও। এই পদবী ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তুলেছেন সেলফি এবং ছবি। তাদের সেই ছবি দেখিয়ে সুপারিশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রবেশ করেছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।

একদিকে পীরবাদের বয়ান করতেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রচার প্রচারণার জন্য সফর করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। সেখানে তার লম্বা বয়ান এবং মোনাজাতে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই নিয়েছেন মোবাইল নম্বর। তারপরে থেকেই প্রতারণার শুরু।

আব্দুল মুত্তালিব চিশতি

পীরবাদ এবং রাজনৈতিক পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মাস্টাররোলে চাকরি দেওয়া, রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ দেওয়া, দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেম্বার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর অথবা মেয়র প্রার্থীদেরকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেওয়ার নাম করে একেকজনের কাছ থেকে নিয়েছেন ৬ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। গত নয় বছর ধরে চলে আসছিল তার এমন প্রতারণা।

ডিবি জানায়, ঘরে দুই বউ আর অসংখ্য মুরিদান থাকলেও এই ভন্ড পীর পরিচালনা করতেন ‘ঢাকা গে কমিউনিটি’ নামের দুটি ওয়েব পেজ চালাতেন তিনি। পেজ দুটির মাধ্যমে প্রায় ১০০ বয় ফ্রেন্ডের (প্রেমিক) সঙ্গে চালাতেন অস্বাভাবিক ও বিকৃত যৌনাচার। ভণ্ড এ পীরের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। শতাধিক প্রতারিত ভুক্তভোগী লোকলজ্জায় অভিযোগ করছেন না।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, আবদুল মুত্তালিব একজন ভন্ড পীর ও প্রতারক। সে ধর্ম এবং রাজনীতিকে ব্যবহার করেছে মূলত বিকৃত যৌনাচার ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। সে বিভিন্ন আশেকের (ভক্ত) মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে গে অ্যাকটিভিটিতে লিপ্ত হয়েছে। এছাড়া সে রাজনৈতিক সংগঠনের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন জনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে। কাউকে কাউকে নির্বাচনে নৌকার প্রতীক বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েও হাতিয়ে নিয়েছে টাকা। এমন একাধিক অভিযোগ পেয়েছি আমরা। সেগুলো তদন্ত চলছে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর