রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

বিচারকের খাস কামরায় ৩ ঘন্টা অবস্থান করেও স্বীকারোক্তি দেননি বাবুল


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৭ মে, ২০২১ ৪:৪০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে আজ সোমবার (১৭ মে) দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের খাস কামরায় তাকে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু বিচারকের খাস কামরায় প্রায় তিন ঘন্টা অবস্থান করেও বাবুল আক্তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে বেলা পৌনে তিনটার দিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ রাজনীতি সংবাদকে জানান, পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছিলেন, আসামি (বাবুল আক্তার) ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন। আসামিকে বিচারকের খাস কামরায় পাঠানো হয়। তিনি প্রায় তিন ঘন্টা সেখানে অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দেননি। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পিবিআই আবার আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করবে কি না সেটা পিবিআইয়ের সিদ্ধান্ত বলে জানান কাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ।

মিতু হত্যার অভিযোগে করা মামলায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১২ মে রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার কারণ-সম্পর্কিত সব প্রশ্নই তিনি এড়িয়ে গেছেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন স্বামী বাবুল আক্তারের নাম।

গত ১২ মে মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। ওই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে খুন হওয়া মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাবুল ছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ৭ জনকে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন-কামরুল সিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোহাম্মদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আনোয়ার, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ সাজু ও মোহাম্মদ কালু।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে চট্টগ্রামের কামরুল শিকদার মুসা নামে এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে কল যায় তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোন থেকে। সালাম দিয়ে মুসা ফোনটি রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে বাবুল আক্তার বলেন, ‘তুই কোপালি ক্যান?’
৩/৪ সেকেন্ড থেমে আবার বলেন, ‘বল তুই কোপালি ক্যান? তোরে কোপাতে কইছি?’
অপর প্রান্ত থেকে মুসা বলেন, ‘না মানে…।’
বাবুল আক্তার এরপর ফোনটি কেটে দেন।

মাত্র ২৭ সেকেন্ডের মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ডটিই এখন মিতু হত্যার প্রধান আলামত ও সাক্ষী। এই ২৭ সেকেন্ড কলের কথোপকথনের রেকর্ড পেয়েই হত্যাকাণ্ডের ১৯ দিন পর ২০১৬ সালের ২৪ জুন রাতে বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুলকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কিছু দিন পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন।

পাঁচ বছর আগে বাবুল আক্তারকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করার পর মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে।

মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন গত ১২ মে বাবুল আক্তারকে আসামি করে মামলা করার পর সাংবাদিকদের বলেন, বাবুলের সঙ্গে এক এনজিও নারী কর্মীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তার মেয়ের সঙ্গে বাবুলের ঝগড়া হয়। মৃত্যুর আগে মিতু বিষয়টি তাদের জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি মিতু হত্যা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী জানান, শিগগিরই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর