শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৯ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

৫৩ বছর পর ফেসবুক মিলিয়ে দিলো দুই দেশে থাকা মা-মেয়েকে


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৫ মে, ২০২৪ ১০:২১ : পূর্বাহ্ণ
৫৩ বছর পর মিলন হলো মা-মেয়ের।
Rajnitisangbad Facebook Page

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ আলাদা করে দিয়েছিলো মা-মেয়েদের। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাকে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তানে আর দুই মেয়ে থেকে যান বাংলাদেশে। ফেসবুকের কল্যাণে অবশেষে দীর্ঘ ৫৩ বছর পর মিলন হলো সেই মা-মেয়ের।

ফেসবুকের মাধ্যমে মেয়েদের সন্ধান পেয়ে শুক্রবার (৪ মে) রাতে বাংলাদেশে আসেন মা চেমন আরা বেগম। এ সময় ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। মা-মেয়ে একে অপরের ভাষায় কথা বলতে না পারলেও বাধ মানেনি ভাষার ভিন্নতা। ভাষার তফাৎ বাধা হয়নি আবেগ প্রকাশেও।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে চাকরি করতেন দিনাজপুরের এস এম মুসলিম। চাকরির সুবাদে তিনি বিয়ে করেন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিক চেমন আরা বেগমকে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময়ে তিন মেয়েকে নিয়ে তারা ছিলেন দিনাজপুরের গ্রামের বাড়িতে।

হঠাৎ বাবা এসএম মুসলিম এবং কোলের সন্তানসহ তার স্ত্রী চেমন আরাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। পরে চেমন আরা বেগমকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভারতের শরণার্থী শিবিরে। মা-বাবাহীন দুই মেয়েকে রাস্তার পাশে কাঁদতে দেখে আশ্রয় দেন এক ট্রাক ড্রাইভার।

যদিও যুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের মেয়েদের খুঁজে বের করেন এস এম মুসলিম। কিন্তু খুঁজে পাননি তার স্ত্রীকে। বড় হয়ে মেয়েরা বিষয়টি জানলেও মাকে খুঁজে পাওয়ার কোনো মাধ্যম পাননি তারা।

নাতিন জামাই জাহিদুল ইসলাম নিটুলের উদ্যোগে চেমন আরার খোঁজ শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। শাশুড়ির মুখে তার মা হারানোর গল্প শুনে তাদের ছোট কালের একটি ছবিসহ বিভিন্ন দেশের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে গিয়ে পোস্ট করতে থাকেন নিটুল।

দীর্ঘ প্রায় ১০ বছরের চেষ্টায় ২০২২ সালে পাকিস্তানি এক ইউটিউবারের মাধ্যমে সন্ধান মিলে চেমন আরার। তারপর নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে হলো সরাসরি দেখা।

পরিবার হারিয়ে পাকিস্তান যাওয়ার পর সেখানে আবারও বিয়ে হয়েছিল চেমন আরার। সেখানেও তার সন্তান ও নাতি-নাতনী থাকলেও মারা গেছেন স্বামী।

তাই বাংলাদেশের সন্তান ও নাতি-নাতনীদের প্রত্যাশা, মুক্তিযুদ্ধের কারণে পরিবার হারানো চেমন আরা যেন ট্যুরিস্ট হিসেবে নয়, এ দেশের বধূ হিসেবে সন্তানদের কাছে নিয়মিত আসা যাওয়া করতে পারেন। রাষ্ট্রের কাছে এই সুযোগটি চান তারা।

চেমন আরার মেয়ে উম্মে সেলিনা বলেন, ‘আমরা যখন হারিয়ে যাই তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র ৪ বছর। খুব বেশি কিছু মনেও নাই। শুধু মনে আছে রাস্তার পাশে কাঁদছিলাম। পরে ট্রাক চালক আমাদের গাড়িতে করে নিয়ে গেছেন। পরে বাবাকেও পেয়েছি, মাকে না পেয়ে বাবা আমাদের জন্য অন্য মা এনেছিলেন। সেই মা আমাদের বড় করেছেন। কিন্তু নিজের মাকে তো পাইনি। এখন পেলাম, কিন্তু ছমাস পরে মাকে চলে যেতে হবে এটা মানতেই কষ্ট হচ্ছে। আমরা মাকে রেখে দিতে চাই।’

চেমন আরাকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া নাতিন জামাই জাহিদুল ইসলাম নিটুল বলেন, ‘উনার যেহেতু সেখানে পরিবার আছে সেখানেও উনাকে যেতে হবে। তবে আমরা চেষ্টা করবো উনাকে ট্যুরিস্ট হিসেবে নয়, এ দেশের বধূ হিসেবে যৌথ নাগরিকত্বের বিষয়ে কিছু করা যায় কিনা। সরকার চাইলে এটা হয়তো সম্ভব হবে।’

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর