ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী অবস্থায় লেখক, কার্টুনিস্ট মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (১ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করার পর বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়া প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা আজ সন্ধ্যা ছয়টায় মশাল মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।
লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি ও আইনটি বাতিলের দাবিতে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় আটকিয়ে অবস্থান নেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেন। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেন।
এ সময় শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান। সেই সঙ্গে মুশতাকের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করার দাবি জানান।
লেখক মুশতাক আহমেদকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে বলে দাবি করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, ‘লেখক মুশতাক আহমেদ সাধারণভাবে মৃত্যুবরণ করেননি। এই সরকারের কারণে তিনি তিলে তিলে মারা গেছেন। আমরা অবিলম্বে মুশতাক আহমেদের খুনের বিচার চাই।’
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। প্রতিবাদের ভাষাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বন্ধ করতে হবে।
আল কাদেরী জয় বলেন, পুরো দেশটাকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। এ পুলিশি রাষ্ট্রের বলি লেখক মুশতাক আহমেদ। আমরা প্রতিবাদ না করলে এই ঘটনা বন্ধ হবে না। আরো ঘটতে থাকবে। এসময় তিনি সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন অভিযোগ করেন, গত বছরের এপ্রিলে লেখনীর মাধ্যমে দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন লেখক মুশতাক। তার অপরাধ ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তাই কারাগারে আটকে রেখে তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করলেও তা নির্বিকারভাবে নাকচ করা হয়েছে। এটি নির্মম রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড।
উল্লেখ্য, গতকাল (২৫ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মুশতাক আহমেদ কাশিমপুর কারাগারে মারা যান। তিনি র্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটক ছিলেন। গত বছরের মে মাস থেকে গুরুতর অসুস্থ মুশতাক আহমেদ কারাবন্দী ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী যা প্রয়োজন তা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ শুক্রবার তিনি চট্টগ্রামে নবনির্মিত পুলিশ সুপারের ভবন উদ্বোধনের পর সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারা মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে আমি সংবাদটা পেয়েছি। কারাগারের ভেতরে একটা স্বাভাবিক মৃত্যু হোক, বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হোক-সেটার জন্য আমরা একটা ময়নাতদন্ত করে থাকি। ময়নাতদন্তের পর আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব, কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে। আমাদের তদন্ত কমিটি যেটা বলবে সেই অনুযায়ী যা প্রয়োজন আমরা করব।’