মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

শিল্পপতির সাজাপ্রাপ্ত পুত্রের ‘আপত্তিতে’ বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী কেরানীগঞ্জে!


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ৬:৫৮ : অপরাহ্ণ
ইয়াসিন রহমান টিটু
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রামের এক শিল্পপতির পুত্র যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন রহমান টিটুর ‘আপত্তিতে’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে স্থানান্তর করা হয় কেরানীগঞ্জে।

আসলাম চৌধুরীর সাথে টিটুকে প্রায় চার মাস আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ২৫ দিন পর কুমিল্লা থেকে তাকে আবার চট্টগ্রাম কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু আসলাম চৌধুরী রয়েছেন কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টিটুকে ২৫ দিনের ব্যবধানে কেন চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় আনা-নেওয়া হলো রাজনীতি সংবাদের কাছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি দুই কারা কর্তৃপক্ষ।

১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের চুংকিং রেস্টুরেন্টের সামনে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবিকে।

ওই ঘটনায় পরদিন ডবলমুরিং থানায় ইয়াসিন রহমান টিটুসহ আটজনকে আসামি করে মামলা করেন জিবরানের স্ত্রী তিতলী নন্দিনী।

জিবরানের বাবা টি এ খান তখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মহাপরিদর্শক ছিলেন।

অন্যদিকে আসামি ইয়াসিন রহমান টিটু চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে।

১৯৯৯ সালের ২২ নভেম্বর আটজনকে আসামি করে এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০২ সালের ১২ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামি ইয়াসিন রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে অন্য ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন।

রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে উচ্চ আদালত ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ইয়াসিনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে মামলার আরেক আসামি মোহাম্মদ ছিদ্দিককে বেকসুর খালাস দেন।

খুনের ঘটনার পর থেকে প্রায় ১২ বছর বিদেশে পলাতক ছিলেন টিটু। পরে ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে পরদিন চট্টগ্রামে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

হত্যা মামলায় কারাগারে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকার কেওয়াই স্টিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ইয়াসিন রহমান।

গত ৯ বছর ধরে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামিকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির বিশেষ বন্দীর মর্যাদা (ডিভিশন) দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম কারাগার সূত্রের খবর, গত ২৬ আগস্ট ইয়াসিন রহমানকে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ২৫ দিন পর ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে আবার চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে আসা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, কারা অধিদপ্তরের নির্দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন রহমানকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু কী কারণে তাকে স্থানান্তর করে আবার ফিরিয়ে আনা হয় সেটা আমাদের জানা নেই।

কুমিল্লা কারাগারের জেলার আসাদুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, কারা অধিদপ্তরেরর আদেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন রহমানকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে এখানে স্থানান্তর করে আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেন তাকে এতো অল্প সময়ের জন্য এখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল সেটা আমরা জানি না। হয়তো এর পেছনে কারাগারের অভ্যন্তরীণ, প্রশাসনিক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কারণ থাকতে পারে।

ইয়াসিন রহমান টিটুর বিরুদ্ধে কারাগারে বসেই নিজের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। তিনি আত্মসমর্পণের পর অসুস্থতার অজুহাতে এক বছর আড়াই মাস হাসপাতালে ছিলেন।

এ নিয়ে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পরদিনই তাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠানো হয়।

দুই বছর আগে কেওয়াই স্টিলের নির্বাহী পরিচালক মুনির হোসেন খানকে কারাগারের মধ্যেই মারধর করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন টিটু। লাঞ্ছিত হওয়ার অপমানে প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন মুনির। কিন্তু পদত্যাগ করার পর মুনিরের বিপদ আরো বাড়ে।

গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনির হোসেন খানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত নৌ-কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন খান অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল কারাগারের ভেতরেই আমার ছেলেকে অপদস্থ ও মারধর করেন জিবরান তায়েবি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন রহমান টিটু। মুনিরকে শায়েস্তা করার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ২৬টি মামলা করেছে কেডিএস গ্রুপ।

চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ইয়াসিন রহমানকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে স্থানান্তর করার সময় সাধারণ সেলে থাকা সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে তিনি ভিআইপি হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কেন তাকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করা হবে না-তা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তুলেন। কারা কর্তৃপক্ষ ইয়াসিন রহমানকে কুমিল্লায় স্থানান্তরের তিন দিন পর তার তীব্র আপত্তির মুখে আসলাম চৌধুরীকে পাঠিয়ে দেয় কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত আসলাম চৌধুরী এ ঘটনায় ইয়াসিন রহমানের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হন বলে জানায় সূত্রটি।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন রহমানকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তরের তিন দিন পর আসলাম চৌধুরীকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ইয়াসিন রহমানের আপত্তির বিষয়টি আমার জানা নেই।

২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী। গত চার বছর ধরে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি ছিলেন। তার বিরুেদ্ধ অর্থ আত্মসাৎ, চেক প্রতারণা এবং বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা ৭৮টি মামলা হয়েছে। সবকটি মামলার জামিন শেষে তিনি এখন কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তির প্রহর গুনছেন।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর