‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে দেশ-বিদেশের বাহারি নকশার একশ’টি নৌকার মডেল নিয়ে বরগুনায় যাত্রা শুরু করেছে ‘বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর’। বিলুপ্তপ্রায় বাহারী নৌকাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করানো ও পর্যটক আকর্ষণ করতেই গড়ে তোলা হয়েছে এই জাদুঘর।
বরগুনা জেলা প্রশাসন ভবন সংলগ্ন পুরাতন পৌরগণ পাঠাগার মাঠে স্থাপন করা হয়েছে দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর। ৭৮ শতাংশ জমির উপর একশ ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের নৌকার আদলে ৮১ দিনে নির্মাণ করা হয়েছে এ জাদুঘর।
প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে নৌকা ব্যবহৃত হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নৌকা ব্যবহার করতেন। নৌকা ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বহন করে।
বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূল ঘেঁষে প্রবাহিত পায়রা, বলেশ্বর, বিশখালী ও খাকদোন বিধৌত জেলা বরগুনা। এ জেলার নামকরণের যে একাধিক জনশ্রুতি রয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই নৌকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলায় রয়েছে প্রায় ৬০,০০০ মৎস্যজীবী, নৌকা যাদের জীবনের সাথে অপরিহার্যভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের নৌকা রয়েছে। কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা হারিয়ে যাচ্ছে।
এসব হারিয়ে যাওয়া নৌকার স্মৃতি ধরে রাখতে মুজিব শতবর্ষে বরগুনা জেলা প্রশাসন দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।
স্বয়ংসম্পূর্ণ এই জাদুঘরে থাকছে দেশ-বিদেশের নানান আকৃতির একশ’ প্রকারের নৌকার অনুচিত্র, একটি নৌকা গবেষণা কেন্দ্র, আধুনিক লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা, ৭ডি থিয়েটার, ফুড ক্যাফে থাকছে। এছাড়া জাদুঘরের থাকছে ওয়েভ ঠিকানা (www.boatmuseumbarguna.com)। ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি হতে সব দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর খুলে দেওয়া হবে।
বড় ছোট খাল-নদী-সাগরে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বিবেচনায় নৌকার প্রকরণ রয়েছে জাদুঘরে। নতুন প্রজন্ম এখানে এসে জানতে পারবে নৌকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে।
বাঙালি সত্তার সাথে নৌকার যে আত্মিক সম্পর্ক সেটি মূল্যায়নে এই জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
নৌকা জাদুঘর মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের ৬দিনই সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রবেশ মূল্য সাধারণের জন্য ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা।