রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ মে, ২০২৪ ১০:০৪ : পূর্বাহ্ণ
ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে কসাই জিহাদ হাওলাদার। খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্ফোরক তথ্য জানতে পেরেছে কলকাতার পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের দাবি, কসাই জিহাদ জানিয়েছে, এমপি আনারের দেহ ৮০ টুকরো করে নিউ টাউন, ভাঙড় এলাকার নানা জায়গার জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার বিনিময়ে সে ৫ হাজার টাকা পেয়েছে।
তার এই স্বীকারোক্তির পর তদন্তকারীদের একাংশের মত, সেসব খণ্ডাংশ উদ্ধার করা আরও কঠিন হয়ে গেল। এরইমধ্যে তা কোনো না কোনো জলচর প্রাণীর পেটে চলে যেতে পারে।
পুলিশ জানায়, এমপি আনারের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। হাড়, মাংস পৃথক করে হলুদ মাখিয়ে একেকটি টুকরো একেক জায়গার জলাশয়ে ফেলা হয়েছে।
জানা গেছে, খুলনার দিঘলিয়ার বারাকপুরের বাসিন্দা জিহাদ হাওলাদার বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে যায়। কখনও দিল্লি আবার কখনও মুম্বাইয়ে বসবাস করত। সেখানে ‘দক্ষ কসাই’ হিসেবে তার পরিচিতি আছে। হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই মাস আগে তাকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়।
হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি আখতারুজ্জামান শাহীনই তাকে নিয়ে আসেন। আনার হত্যার ঘটনায় জড়িত ভাড়াটে সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার সহযোগী জিহাদ। হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর গতকাল শুক্রবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
জিহাদ প্রথমে নিজেকে সিয়াম বলে পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। অবশ্য পরে তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
জিহাদ জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার পরপরই বাইরে থেকে আসা ক্লান্তির ধকল সারতে বেসিনে হাতমুখ পরিষ্কার করেন এমপি আনার। এ সময় ক্লোরোফর্ম দিয়ে তাকে অচেতন করা হয়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আনারকে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সে।
আনার মারা যাওয়ার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে সে। চামড়া থেকে মাংস আলাদা করে জিহাদ। এরপর লাগানো হয় হলুদ। হলুদ মেশানো টুকরো টুকরো অংশ ফ্রিজেও রাখা হয়। সবশেষে লাশের টুকরো ব্যাগে ভরা হয়।
এরপর ব্যাগভর্তি লাশের টুকরো দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় একটি খালে ফেলা হয়েছে।
জানা গেছে, আনারকে হত্যার জন্য জিহাদকে নিউ টাউন এলাকায় চিনার পার্কের একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়। এরপর তাকে মূল ঘটনাস্থল সঞ্জিভা গার্ডেনে আনা হয়। আজীম ঢোকার আগে থেকেই সে সেখানে অবস্থান করছিল।
গত ১২ মে কলকাতায় চিকিৎসা করতে যান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। ১৩ মে রাতে তিনি নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে খুন হন। দিন দুই নিখোঁজ থাকার পর তার হত্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার হয় জিহাদ ও সিয়াম নামে দুই ব্যক্তি।
আরও পড়ুন:
এমপি আনার ফ্ল্যাটে ঢুকলেন পায়ে হেঁটে, বের হলেন টুকরো টুকরো হয়ে
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডরিন বললেন, বাবার লাশের এক টুকরো মাংস চাই
এমপি আনার হত্যা: ৮ দিনের রিমান্ডে তিন আসামি
এমপি আনার হত্যায় ভারতে কসাই গ্রেপ্তার
এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই-তিন মাস ধরে: ডিবি
৫ কোটি টাকার চুক্তিতে এমপি আনার খুন, নেপথ্যে…
ইন্টারপোলের রেড নোটিশ ছিল এমপি আনারের বিরুদ্ধে