রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪ | ২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৯ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

৫ কোটি টাকার চুক্তিতে এমপি আনার খুন, নেপথ্যে…


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৩ মে, ২০২৪ ১০:৩৯ : পূর্বাহ্ণ
আখতারুজ্জামান শাহীন, আনোয়ারুল আজীম, আমানউল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের কলকাতায় গিয়ে পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাকে কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে হত্যাকারীরা।

মরদেহ উদ্ধার না হলেও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, এমপি আনারকে হত্যার পর টুকরা টুকরা করে কাটা হয় লাশ। এরপর উবার ভাড়া করে ট্রলিতে ভরে সেই লাশ গুম করেন কিলিং মিশনের সদস্যরা। ৫ কোটি টাকার চুক্তিতে হত্যা মিশনে অংশ নেন ভাড়াটে কিলাররা।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। তারা হলেন-হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানউল্লাহ আমান, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

পুরো কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন আমানউল্লাহ আমান নামের একজন। তাকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এমপি আনার হত্যায় ঢাকা ও কলকাতায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। কলকাতার মামলাটি পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমপি আনার হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আখতারুজ্জামান শাহীন। তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। শাহীনের ভাই মো. সহিদুজ্জামান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র।

এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শাহীনের বেয়াই ও চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আনারকে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের একটি ফ্ল্যাটে ট্র্যাপে ফেলে ডেকে আনেন। এরপর তাকে জিম্মি করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। মিশন সফল হওয়ার পর আনারের মরদেহের টুকরোগুলো গুম করার জন্য সিয়াম ও জিহাদ নামের দুজনকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন আমান। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার আমানুল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ১২ মে এমপি আনার কলকাতা যাবেন-এটা আগে থেকেই অবহিত ছিলেন শাহীন। হত্যার প্রস্তুতি হিসেবে কলকাতায় চাপাতিও সংগ্রহ করে রাখেন। ভারতে যাওয়ার পর কৌশলে এমপি আনারকে বাসায় ডেকে নেন। এর পর সিয়াম, ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ মিলে চাপাতির মুখে আনারকে জিম্মি করে। এক পর্যায়ে তারা আনারকে শাহীনের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য কড়া ভাষায় ধমক দেয়। এ নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হলে হঠাৎ বালিশচাপা দিয়ে আনারকে হত্যা করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে নিউটাউনের ওই ফ্লাটে আনারকে খুন করে লাশ টুকরো করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় নেওয়া হয় ১০ মিনিটেরও কম। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় অন্তত পাঁচজন। এরপর ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে খণ্ডিত অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। এছাড়া বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটের ফ্রিজে ও প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে মরদেহের কিছু টুকরো। প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত WB18 AA 5473 নম্বরের গাড়িটিও জব্দ করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে গাড়িটিকে শনাক্ত করার পর মালিকসহ সেটি নিউটাউন থানায় আনা হয়। গাড়িটি থেকে ফরেনসিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, হত্যার ১৩ দিন আগে গত ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান শাহীন, তার বান্ধবী সেলিস্তি রহমান ও আমানুল্লাহ কলকাতা যান। নিউ টাউনে তারা শাহীনের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ওঠেন। তবে আমানুল্লাহ ও সেলিস্তিকে কলকাতায় রেখে ১০ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন। এরপর ১৩ মে আনারকে খুন ও লাশ গুম নিশ্চিত করতে আকাশপথে কলকাতায় যান শাহীন। সেখানে গিয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া পাঁচ সদস্যকে বৈধ ও অবৈধ পথে দেশে ফেরত পাঠান তিনি। দুই দিন পর শাহীন দেশে ফিরে আসেন। এর এক দিন পরই ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। ভিস্তেরা এয়ারলাইন্সে দিল্লি, এরপর কাঠমান্ডু ও দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বর্ণ চোরাচালানের বিরোধের জের ধরেই দেড় মাস আগে এ খুনের পরিকল্পনা করা হয়। আনারের বিরুদ্ধে হুন্ডি কারবার, মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ভারতে অবৈধ কারবারকেন্দ্রিক কোনো বিরোধের জের ধরে এ হত্যায় আর কারা জড়িত তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ইন্টারপোলের রেড নোটিশ ছিল এমপি আনারের বিরুদ্ধে

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর