শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

এমপি আনার ফ্ল্যাটে ঢুকলেন পায়ে হেঁটে, বের হলেন টুকরো টুকরো হয়ে



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ মে, ২০২৪ ১০:২৩ : অপরাহ্ণ

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার কলকাতার নিউ টাউনে সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন দুজন ব্যক্তির সঙ্গে। কিন্তু জীবিত আর বের হননি। বের হয়েছেন খণ্ড খণ্ড হয়ে, ট্রলি ব্যাগ আর পলিথিনে।

একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৩ মে দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে সঞ্জীবা গার্ডেনের আলোচিত সেই ফ্ল্যাটে ঢুকেন এমপি আনার। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দুজন হলেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ এবং তার সহযোগী ফয়সাল। এমপি আনার তখন তার জুতা রাখেন দরজায় রাখা র‍্যাকে। বেশ শান্তশিষ্ট ও স্বতস্ফুর্তভাবে পায়ে হেঁটে ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা যায় তাকে।

১৪ মে সকাল ৫টা ৫ সেকেন্ডে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, হাতে ছিল হালকা সবুজ রঙের একটা ট্রলি ব্যাগ। এরপর তার সঙ্গে পলিথিন ও কাগজের শপিং ব্যাগ হাতে বের হন আরেকজন। বের হওয়ার সময় শিমুল ভুইয়া বাইরে থেকে দরজা চাবি দিয়ে লক করে দেন। লিফট দিয়ে নেমে তারা বের হয়ে যান এমপি আনারের লাশ গুম করতে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ফ্ল্যাট থেকে যে দুজনকে স্যুটকেস নিয়ে বের হতে দেখা গেছে, তারাই এমপি আনারকে হত্যা করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে রক্তের দাগ পেয়েছিল পুলিশ। আনারকে হত্যা করে তার দেহ কেটে টুকরা টুকরা করে এবং হাড় ও মাংস বিচ্ছিন্ন করে ট্রলি ব্যাগ আর পলিথিনে ঢুকিয়ে কলকাতা শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেলা হয়েছে।

এমপি আনারকে হত্যার জন্য ভারতের মুম্বাই থেকে ‘কসাই’ খ্যাত জিহাদ হাওলাদারকে কলকাতায় আনা হয়। তাকে গতকাল গ্রেপ্তারের পর আজ ১২ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আনারকে হত্যার পর কীভাবে তার মরদেহ টুকরা টুকরা করা হয় এরই মধ্যে তার রোমহর্ষক বর্ণনা মিলেছে।

জিহাদের বর্ণনা অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের সময় তারা চারজন ছিলেন। আনোয়ারুলকে হত্যার পর তাঁরা আধা ঘণ্টার মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করেন। হত্যার পর একজন এমপি আনারের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে চলে যান। আর বাকিরা মরদেহ টুকরা টুকরা করেন। এরপর লাশের হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। মাংসের মধ্যে হলুদ ছিটিয়ে দেন, যাতে পথে কেউ ধরলে বলতে পারে, বাজার থেকে কেনা। হাড়গুলো ট্রলি ব্যাগে বাইরে নিয়ে যান।

জিহাদকেকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল রাতেই কলকাতা পুলিশ এলাকার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণবাটি সেতুর কাছে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালায়। নিউ টাউন এলাকার যে ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়, তার সামনে দিয়েই বয়ে গেছে এই খাল। তবে এখনো মরদেহের কোনো সন্ধান মেলেনি।

পুলিশ বলছে, আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনের বান্ধবী এক তরুণীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাকে নিয়েই কলকাতার বিধাননগরের নিউ টাউনে ওই ভাড়া ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন খুনিরা। আনোয়ারুলকে ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নিতে ওই তরুণীকে ব্যবহার করা হয়। আনারকে ওই তরুণী ও আরেকজনের সঙ্গে একটি লাল গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। সেটি জব্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ঢাকায় পুলিশ মোহাম্মদপুর ও সাভার থেকে শীলাস্তি রহমান নামে ওই তরুণীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ বলছে, আক্তারুজ্জামান শাহীন সীমান্তপথে ভারতে সোনা পাচার করতেন। চোরাই সোনা সীমান্ত পার করতে সহায়তা করতেন এমপি আনারের ঘনিষ্ঠ লোকজন। বিনিময়ে তারা কমিশন পেতেন। গত ছয় মাসে সোনার একাধিক বড় চালান মেরে দেওয়া হয়। এসব চালানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সোনা ছিল। এতে ক্ষিপ্ত শাহীন সোনা ফিরে পেতে সংসদ সদস্যকে বারবার চাপ দেন এবং বিকল্প মাধ্যমে চোরাচালান করতে থাকেন। এ নিয়েই দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব নিরসনে কয়েক মাস ধরে তাঁরা বসতেও চেয়েছিলেন। শেষ সময়ে পরিকল্পনা বদলে আনোয়ারুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন শাহীন।

ডিবি পুলিশ বলছে, দু-তিন মাস আগে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাসায় আনোয়ারুলকে খুনের পরিকল্পনা হয়। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশেই হত্যা করতে। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার কারণে বিদেশে খুনের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতো এমপি আনার কলকাতায় কখন যাবেন, সেটা দেখে বাসাভাড়া নেওয়া হয়।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে ওঠেন কলকাতার বরাহনগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। ১৩ মে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। ১৮ মে স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল। এরপর তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে।

আরও পড়ুন: 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডরিন বললেন, বাবার লাশের এক টুকরো মাংস চাই

এমপি আনার হত্যা: ৮ দিনের রিমান্ডে তিন আসামি

এমপি আনার হত্যায় ভারতে কসাই গ্রেপ্তার

এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই-তিন মাস ধরে: ডিবি

৫ কোটি টাকার চুক্তিতে এমপি আনার খুন, নেপথ্যে…

 ইন্টারপোলের রেড নোটিশ ছিল এমপি আনারের বিরুদ্ধে

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর