রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

পাহাড়ি ৭ উপজেলায় নিজেদের শাসন চায় কুকি-চিন


পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে চায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১:০১ : অপরাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। পাহাড়ি এই সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের সাম্প্রতিক তৎপরতার কারণ স্পষ্ট করেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, অর্থ নয়, বরং পার্বত্য অঞ্চল দখলই মূল উদ্দেশ্য তাদের। পাহাড়ি সাত উপজেলায় নিজেদের শাসন চায় কুকি-চিন। এ লক্ষে সেখানে সশস্ত্র বাহিনীও গঠন করতে চায় সংগঠনটি।

গত শনিবার (৬ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে সংগঠনটি।

‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে সামনে এসেছে এমনই দাবি সংবলিত একটি পোস্ট।

দেশের বিজ্ঞ মহল, বিশ্লেষক ও সাংবাদিকগণের জ্ঞাতার্থে এবং টকশোর আলোচনায় বিশেষ সুবিধার্থে পোস্টটি করা হয়েছে দাবি করে তাতে বলা হয়, আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়টি উপজেলা নিয়ে নিজেদের পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে এলেও এখন সাতটি উপজেলা নিয়ে ‘স্বশাসিত পরিষদ’ চায় কেএনএফ, যার নাম হবে ‘কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল’ (কেটিসি)।

পাহাড়ি ৭ উপজেলায় সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে নিজেদের শাসন চায় কুকি-চিন

ছয় দফা দাবি সংবলিত পোস্টটিতে বলা হয়, দাবিকৃত অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানকার ভূমি ও পর্যটন বিষয়ক সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ডের সর্বময় ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কেটিসিকে দিতে হবে সরকারের। এছাড়া দাবি অনুযায়ী, কেটিসি’র অঞ্চলে পুলিশ বাহিনীর নিয়োগ প্রদানসহ সব ক্ষমতা কেএনএফেরই থাকবে।

কেএনএফের অতীতের সব হামলা ও অন্যান্য আইন লঙ্ঘনকারী কর্মকাণ্ডকে আন্দোলন দাবি করে তাতে জড়িত কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

পরবর্তী দফায় দাবি করা হয়েছে, যেন বিভিন্ন সময়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল তথা ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যাওয়া বম জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের পালেতুয়া এলাকায় পালিয়ে যাওয়া খুমি ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের সুযোগ ও সুব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

আর পোস্টের সবশেষ দফায় নিজেদের সশস্ত্র বাহিনী গঠনের সুযোগ দাবি করা হয়েছে কেএনএফের পক্ষ থেকে, যার নাম হবে কুকি-চিন আর্মড ব্যাটেলিয়ন (কেএবি)।

ফেসবুক পোস্টটি থেকে জানা যায়, বান্দরবানে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী এ সশস্ত্র সংগঠনটির সঙ্গে দুই দফায় মুখোমুখি সংলাপ হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির।

আরও পড়ুন: সরকারকে কড়া ভাষায় যে বার্তা দিলো কুকি-চিন

ঈদের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি আরেক দফায় উভয়পক্ষের সংলাপে বসার কথা থাকলেও হঠাৎ গত ২ এপ্রিল রাতে বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের তিনটি শাখায় নজিরবিহীন ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে কুকি-চিন।

তিন ব্যাংকে লুটপাট চালানোর পর তারা সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় র‍্যাবের মধ্যস্থতায় রুমা বাজারে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন নামে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়।

তবে ওইদিন রাতে দুই দফায় থানচি ও আলীকদমে সংগঠনটির পৃথক দুটি গ্রুপ চড়াও হয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের ওপর।

এ পর্যন্ত কুকি-চিনের আকস্মিক এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পেছনে তাদের অর্থাভাবের বিষয়টিকেই মূল কারণ হিসেবে ধারণা করা হলেও নিজেদের ফেসবুক পেইজ থেকে শেষ পর্যন্ত ভিন্ন ইঙ্গিত দিলো পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠীটি।

জানা গেছে, নাথান বম নামে এক ব্যক্তি কুকি-চিনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দেশের পার্বত্য অঞ্চলের ত্রাস হয়ে ওঠা গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল শনিবার (৬ এপ্রিল) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রুমা সফরে যান তিনি।

সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ধারণা হচ্ছে যে, কেএনএফের সন্ত্রাসীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ সংগ্রহ করা। তাদের দমনে যা যা করা দরকার তার সবই করবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী।’

আরও পড়ুন:

বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকে কুকি-চিনের হানা, টাকা-অস্ত্র লুট, ম্যানেজার অপহরণ

ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণ: ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে কুকি-চিন

র‍্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে উদ্ধার

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর