শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

যেভাবে অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা কেটেছে ব্যাংক ম্যানেজার নেজামের


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৫ এপ্রিল, ২০২৪ ৮:২১ : অপরাহ্ণ
উদ্ধারের পর র‍্যাবের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

বান্দরবানের রুমা থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন রাসেলকে উদ্ধারের আদ্যোপান্ত জানিয়েছে র‌্যাব। একই সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা ম্যানেজার নেজাম থেকে নানান তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।

আজ শুক্রবার সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

আজ শুক্রবার সকালে বান্দরবানের পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যা‌বের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

গত ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা তাদের নিজস্ব পোশাক পরে বান্দরবানের রুমা সোনালী ব্যাংকের উত্তর দিক (বেথেলপাড়া) থেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগে অতর্কিত হামলা করে মারধর করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য লোককে জিম্মি করে ফেলে।

এ সময় সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের চারটি শটগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ লুট করে। সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা এবং টাকা না পেয়ে ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

র‌্যাব এবং অপহৃত ম্যানেজার নেজামের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ম্যানেজার নেজাম চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে, সন্ত্রাসীরা ভোল্ট ভাঙতে চেষ্টা করে। ম্যানেজার তাদের জানায়, ভল্টে আঘাত করলে সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিষয়টি সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস জেনে যাবে। তখন তারা ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছানোর পর তার চোখ বেঁধে ফেলে।

দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা তাকে পাহাড়ের ঝিরিপথে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ১০-১২ জন সশস্ত্র লোক ছিল বলে র‍্যাবকে জানান নেজাম উদ্দীন। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা তার চোখের বাঁধন খুলে দেয় এবং অন্ধকারে চলার জন্য তার হাতে একটি বাটন মোবাইল সেট ধরিয়ে দেয়। এভাবে প্রথম রাত কেটে যায়।

অপহরণের দ্বিতীয় দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ম্যানেজারকে নাস্তা খেতে দেওয়া হয় এবং পায়ে হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমান ৩০-৩৫ জনের একটি দল ম্যানেজারকে কলা পাতায় করে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি দিয়ে খেতে দেয়। সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন অবস্থানে ম্যানেজারকে ১৫-২০ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত সেখানেই তাকে রাখা হয়। রাতে ম্যানেজারকে ডাল ও ডিম ভাজি দিয়ে সদ্য রান্না করা ভাত খেতে দেয়।

অপহরণকারীরা নিজেদের মধ্যে বম ভাষায় কথা বললেও ম্যানেজার নেজামের সাথে কথা বলার সময় তারা শুদ্ধ বাংলা ভাষা ব্যবহার করতো।

২-৩ জন সশস্ত্র লোক নেজামকে সবসময় ঘিরে রাখতো। এছাড়া ১২-১৩ জনের একটি গ্রুপ তার আশেপাশে অবস্থান করতো। দ্বিতীয় দিন বুধবার রাত ৮ টার দিকে একটি মাচাং ঘরে (টং ঘর) কড়া সশস্ত্র প্রহরায় ম্যানেজারের রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়।

অপহরণের পর কুকি-চিনের সদস্যরা ম্যানেজার নেজামকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয় এবং তিনি যেন প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা না নেন, সে বিষয়ে পরিবারকে সতর্ক করা হয়।

পরিবারের সাথে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের ফোন কলের সূত্র ধরে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে র‌্যাব তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এরপর শুরু হয় কুকি-চিনের সাথে র‌্যাবের যোগাযোগ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে র‌্যাবের মধ্যস্থতায় ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করা হয়। আজ শুক্রবার সকালে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন:

সরকারকে কড়া ভাষায় যে বার্তা দিলো কুকি-চিন

বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকে কুকি-চিনের হানা, টাকা-অস্ত্র লুট, ম্যানেজার অপহরণ

ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণ: ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে কুকি-চিন

র‍্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে উদ্ধার

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর