রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ এপ্রিল, ২০২৪ ৬:২১ : অপরাহ্ণ
‘শবে কদর’ ফারসি শব্দ। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর।
ভারতীয় উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি ‘শবে কদর’ নামেই সমধিক পরিচিত।
মহিমান্বিত এ রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আবার লাইলাতুল কদরের সম্মানে ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি সূরাও আছে পবিত্র কোরআনে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। আপনি (রাসুল (সা.) কি জানেন মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইলের (আ.) সঙ্গে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত।’ (সূরা-কদর, আয়াত: ১-৫)।
কিন্তু রমজানের কোন রাতটি শবে কদর, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোরআন ও হাদিসে। তবে এ সম্পর্কে কতগুলো নিদর্শন দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (সহীহ বুখারি, হাদীস নম্বর-২০১৭)
মুহাদ্দিসগণ (হাদিস শাস্ত্রবিদ) বলেন, লাইলাতুল কদরের রাতটি গোপন রাখার উদ্দেশ্য হলো, যাতে মানুষ শেষ দশকের প্রতিটি রাতকেই কদরের রাত মনে করে ইবাদত করে।
হাদিসে এসেছে যে, কদরের রাতটির কথা রাসুলের (সা.) অন্তর থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে তিনি সেটি ভুলে যান।
তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘হয়তো এর মধ্যেই তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে।’ (সহীহ বুখারি, হাদীস নম্বর-২০২৩)
লাইলাতুল কদর প্রতি বছর রমজানের বিভিন্ন তারিখে নয়, নির্দিষ্ট একই রাতে হয়। লাইলাতুল কদর রমজানের কত তারিখে এ বিষয়ে ৪০টির অধিক মত রয়েছে। তবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে ২৭ রমজানের রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
২৭ রমজান লাইলাতুল কদর একেবারে নির্ধারিত-এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তবে বহুসংখ্যক আলামত রয়েছে যে, ২৭ রমজান লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক।
হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলের (সা.) কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমজানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়।
এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকেও তোমাদের মতো স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। তোমাদের দেখা ও আমার দেখা শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে তা সন্ধান করে।’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর-২০১৫)
শেষ সাতের দুটি অর্থ। একটি হলো, সপ্তম দিনে অর্থাৎ ২৭ তারিখে। দ্বিতীয়টি হলো শেষ সাতটি রাতের যে কোনো একটি রাতে।
রাসুলের (সা.) সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.), হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত উমর (রা.) এবং ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সহ অনেকেই ২৭ রমজান লাইলাতুল কদর হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন ।
এই মতের পক্ষে দলিল হলো, রাসুলের (সা.) সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) কসম খেয়ে বলতেন, রমজানের ২৭তম রাতটি লাইলাতুল কদর। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নম্বর-২৬৬৮)।
হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেছেন, ‘কদরের রাতের পর সকালে সূর্য এমনভাবে উদিত হয় যে, তার মাঝে প্রখর রশ্মি থাকে না।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নম্বর: ২৮৩৪, তিরমিজি, হাদিস নম্বর-৩৩৫১))
মুহাক্কিক (সঠিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী) আলেমরা বলেছেন, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ বা আরবি বর্ণ রয়েছে। আর সূরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় তিনবার রয়েছে। নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়। তাই তাদের মতে ২৭ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। (তাফসিরে মাযহারি)।
আরও পড়ুন:
ফরজ গোসল না করে সাহরি খেলে কি রোজা হবে?
আজান চলাকালে সাহরি খাওয়া যাবে কি?