বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রামে বাণিজ্য মেলায় বঙ্গবন্ধুর হাতে দোতারা! ক্ষুব্ধ দর্শনার্থীরা


চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের দেওয়ালে দোতারা হাতে বঙ্গবন্ধুর স্কেচ সাঁটানো হয়েছে। ছবি: রাজনীতি সংবাদ

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৫ মার্চ, ২০২৪ ৭:৫৩ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দোতারা হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি স্কেচ আঁকা হয়েছে। মেলার মূল ফটকের ডান পাশে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের দেওয়ালে এই চিত্র শোভা পাচ্ছে। এ নিয়ে মেলার দর্শনার্থীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

গত ৩ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে বাণিজ্য মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের ডান পাশে ‘বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন’ নামে একটি স্টল রয়েছে। মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এই স্টলটি খুলেছে। এতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই বিক্রি করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের পাশে রয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বারের মেলার অফিস।

প্যাভিলিয়নের দেওয়ালে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি স্কেচ সাঁটানো হয়। একটা স্কেচে দেখা যায়, চশমা পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধুর হাতে রয়েছে দোতারা, তার বাম পাশে একজনের গলায় ঢোল ঝুলানো এবং নিচে আরেকজনের হাতে তবলা রয়েছে।

দর্শনার্থীদের অনেকে বলছেন, এই চিত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ‘বাউল শিল্পী’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে। এই চিত্র এঁকে মেলার আয়োজক দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে।

দর্শনার্থীদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জনক। তার ছবির সঙ্গে জাতীয় পতাকা কিংবা বাংলাদেশের মানচিত্র দেওয়া যেতো। কিন্তু দোতারা কেন দেওয়া হলো? মেলার আয়োজক এই চিত্রের মাধ্যমে কী বুঝাতে চেয়েছেন?

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের বিক্রয় কর্মী মো. শাহীন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হয়তো বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডায় দোতারা বাজিয়েছিলেন। তাই মনে হয়, দোতারা হাতে বঙ্গবন্ধুর স্কেচ আঁকা হয়েছে।’

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জনক, একজন রাষ্ট্রনায়ক। এমন একজন কীর্তিমানকে দোতারা হাতে উপস্থাপন করে তার জীবন বৈশিষ্ট্যকে বিকৃত করা হয়েছে। এতে তার সম্মানহানি করা হয়েছে। এটা চরম ধৃষ্টতা। মেলার আয়োজকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কখনো দোতারা বাজিয়েছেন কিংবা গান গেয়েছেন-এটা ইতিহাসের কোথাও আমরা দেখি না। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পিতা, জাতির সমস্ত কিছুই তার মধ্যে আছে। বঙ্গবন্ধু কৃষকপ্রেমিক ছিলেন। কৃষক-শ্রমিকদের ভালোবাসতে গিয়ে দলের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করেছিলেন, তাই বলে কি তার হাতে লাঙ্গল ধরিয়ে দিতে হবে? দোতারা হাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকে তার জীবন বৈশিষ্ট্যকে বিকৃত করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি ওদের হাতে বিকৃত হওয়াটা নতুন না। এক সময় যিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবিকে বিকৃত করেছিলেন। এখন তার উত্তরসূরী এই কাজ করেছে। আসলে ওদের কাছে বঙ্গবন্ধু আদর্শের প্রতীক না। ওদের কাছে বঙ্গবন্ধু হলো একটা ব্যবসা।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কখনো গান গেয়েছেন কিংবা যন্ত্র বাজিয়েছেন-এটা আমরা শুনিনি। তাহলে বঙ্গবন্ধুর হাতে দুতারা কেন দেওয়া হলো? এটা তো তার জীবন বৈশিষ্ট্যে ছিলো না। মেলার আয়োজক কতটা অপরিপক্ক হলে এমন কাজ করতে পারে? তারা এমন চিত্র এঁকে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদাহানি করেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ওমর হাজ্জাজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মেলার চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আকতার হোসাইন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এটা তো আমার চোখে পড়েনি। এরকম চিত্র তো হওয়ার কথা না। জাতির জনক দুতারা বাজাবেন-এরকম ছবি তো হতে পারে না। মেলায় গিয়ে আমি চিত্রটা দেখবো। আমাদের ভুলও হতে পারে।’

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে মাসব্যাপী চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে এবার এই মেলার ৩১তম আসর বসে।

এখন চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওমর হাজ্জাজ। তিনি চট্টগ্রাম-১১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম এ লতিফের ছেলে।

২০১৬ সালে এমপি লতিফের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে ঘিরে এম এ লতিফের উদ্যোগে আগ্রাবাদ ও বিমানবন্দর সড়কে অসংখ্য ফেস্টুন লাগানো হয়। এসব ফেস্টুনে ব্যবহার করা ছবিতে লতিফের অবয়বের ওপর বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডল জুড়ে দেওয়া হয়।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপি লতিফের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেন। লতিফের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই বছরের ১ মার্চ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত প্রতিবাদে সমাবেশে তিনি লতিফের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পরে লতিফ সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেন বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা হয়েছে। এ জন্য তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে অভিযুক্ত করেন এবং ছবি বিকৃতির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর