সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ, ছাত্রলীগ নেতা আটক


রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশের সময় :৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ৪:১৭ : অপরাহ্ণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। এছাড়া আরও দুজন শিক্ষার্থী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (৪৫তম ব্যাচ) ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন।

মোস্তাফিজুর মীর মশাররফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক।

ওই নারীর কাছ থেকে জানা যায়, তাদের বাসা সাভারের আশুলিয়ার জিরানী এলাকায়। সে বাসায় ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। মোস্তাফিজের সঙ্গে মামুনের পূর্বপরিচয় ছিল। মাঝে মাঝে মামুন মীর মশাররফ হলে মোস্তাফিজের কাছে থাকতেন।

ওই নারীর স্বামীকে শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে আসেন মামুন। ওই নারীর স্বামী অভিযুক্ত মামুনকে জানান, তারা কিছু আসবাবপত্র কিনবেন। তখন মামুন ওই নারীর স্বামীকে বলেন, এক দোকানে তিনি কিছু টাকা পাবেন, কিন্তু দোকানদার টাকা দিচ্ছেন না। ওই দোকান থেকে যেন আসবাবপত্র কেনেন।

ওই নারীর স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে দোকানে যাবেন। তাই স্ত্রীকে ফোন করে জাহাঙ্গীরনগর আসতে বলেন এবং আসার সময় বাসা থেকে মামুনের জন্য কিছু কাপড় নিয়ে আসতে বলেন।

এরপর অভিযুক্ত মোস্তাফিজ ও মামুন মিলে ওই নারীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন।

পরে অভিযোগকারী নারী ক্যাম্পাসে এলে তার কাছ থেকে কাপড় নিয়ে কক্ষে রেখে আসতে যান মামুন। এরপর মামুন কক্ষ থেকে ফিরে এসে ওই নারীকে বলেন, তার স্বামী হলের অন্য গেট (জঙ্গলের দিক) দিয়ে আসবেন। পরে তাকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন মোস্তাফিজ ও মামুন।

ওই নারী বলেন, ‘মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র বাসা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। এরপর মামুন আমার স্বামীকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসতে বলে। স্বামী চলে গেলে তারা আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজুরও ছিল। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।

গণধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে ছাত্রলীগ থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এই ঘটনায় আজ রোববার সকাল সাতটার দিকে অভিযুক্ত চারজনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন সাভার থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন।

মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া আরও আটক করা হয়-বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামানকে। তারাও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত।

সাভার থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা থেকে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। এর আগে তাকে পালাতে সহযোগিতা করায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। গতকাল শনিবার রাত দুইটা থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ফটকের সামনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন।

এ সময় তারা ‘ক্যাম্পাসে ধর্ষক কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ধর্ষণমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, এ ধরণের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। মূল অভিযুক্ত ও অভিযুক্তকে পালাতে সহযোগিতাকারী সবাইকে মামলার অন্তর্ভূক্ত করার ব্যাপারে আশুলিয়া থানা পুলিশের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কথা হয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর